১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিমসটেক (BIMSTEC) দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা জোরদারে কাজ করছে। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভুটান ও নেপাল। তবে ২৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সংগঠনটির কার্যকারিতা এখনো অনেক ক্ষেত্রে সীমিত।
বর্তমানে বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি এক সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে তিনটি লক্ষ্য উল্লেখ করেছেন: শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নির্গমন। তার মতে, পারস্পরিক আস্থা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব।
ড. ইউনূস দক্ষিণ এশিয়ার যুবশক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “তরুণদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে বিপ্লব আনা সম্ভব।” তিনি বিমসটেক সদস্যদের যুব সম্মেলন আয়োজনেরও পরামর্শ দেন, যা আঞ্চলিক সংহতি বাড়াবে।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন, এটি পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তিনি মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান।
বিমসটেকের কার্যকারিতা বাড়াতে নতুন কৌশল প্রয়োজন বলে মনে করেন ড. ইউনূস। তিনি আঞ্চলিক যোগাযোগ, বাণিজ্য ও জ্বালানি সহযোগিতা জোরদারের ওপর জোর দেন। বিমসটেক গ্রিড সংযোগ চুক্তি (২০১৮) এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে গতিশীল করবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য—দারিদ্র্যের হার ২০১০ সালের ১১.৮% থেকে ২০২২ সালে ৫%-এ নেমেছে। গার্মেন্টস শিল্প ও রেমিট্যান্স এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখলেও বিদেশি বিনিয়োগ ও সহযোগিতার উপর নির্ভরশীলতা রয়ে গেছে।
সম্মেলনে ব্যাংকক ভিশন ২০৩০ গৃহীত হয়েছে, যা বিমসটেকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার রোডম্যাপ। এছাড়া সামুদ্রিক পরিবহন চুক্তি এবং আইওআরএ-ইউএনওডিসির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
বাংলাদেশকে এখন চীন ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে এগোতে হবে। সফল হলে, দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে বাংলাদেশ নেতৃত্বদানকারী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে।