২৯ মার্চ রাত ৮ টায় চীন সফর শেষে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। সফরকালে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
এই সফরটির মাধ্যমে চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষভাবে, চীন থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের ফলে ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য কোটা ও শুল্ক সুবিধা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ চীনে রপ্তানি বাড়াতে সক্ষম হবে, যা দেশের বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা আনবে। এই শুল্ক সুবিধা বাংলাদেশকে বৈশ্বিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে এবং দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
চীন সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও বড় ধরনের অর্থনৈতিক সুযোগ অর্জন করেছে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে এই সফরটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল। সফরের প্রধান অর্জনগুলো নিম্নরূপ:
১. মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পে ঋণ: চীন মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়াও, চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য আরো ১৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এসব সহায়তা বাংলাদেশের অবকাঠামো এবং শিল্প খাতে বড় ধরনের উন্নয়ন ঘটাবে।
২. ২০২৮ সাল পর্যন্ত চীনে কোটা ও শুল্ক সুবিধা: চীন বাংলাদেশের বিদ্যমান শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধা ২০২৮ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে, চীনা বাজারে ২০২৬ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা ছিল। চীনের উপ প্রধানমন্ত্রী ডিং জুয়েশিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেওয়া হয়, যা বাংলাদেশের রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি বড় সুবিধা তৈরি করবে।
৩. চীনে আম রপ্তানি: চীন বাংলাদেশ থেকে আম নিতে আগ্রহী হয়েছে, এবং বাংলাদেশও চীনে আম রপ্তানির জন্য প্রস্তুত। ৬ বছর আগে বাংলাদেশ চীনে আম রপ্তানির জন্য আবেদন করেছিল, কিন্তু নানা জটিলতার কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের মাধ্যমে চীনে আম রপ্তানির পথ খুলে গেছে, এবং আগামী মে-জুন মাস থেকে চীনে বাংলাদেশি আম রপ্তানি শুরু হবে।
৪. তিস্তা প্রকল্পে সহায়তা: বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে চীন থেকে তিস্তা নদী প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা চেয়ে আসছিল। সফরের সময় চীন তিস্তা প্রকল্পে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। এছাড়া, নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হয়, এবং চীনের সহায়তায় ৫০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের জন্য বাংলাদেশ চীন থেকে সহায়তা পেয়েছে।
৫. চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক: সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে ৯টি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা, এবং ৮টি সমঝোতা স্মারকে সাংস্কৃতিক, সাহিত্য, সংবাদ বিনিময়, গণমাধ্যম, ক্রীড়া ও স্বাস্থ্য খাতের সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতি সাধন করবে।
এই সফর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করেছে, যা দুই দেশের বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি সাধন করবে। চীন সফরের এই অর্জন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্যিক উন্নয়নে একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।