বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে দেওয়া এক বক্তব্যে ভারতীয় রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গত ২৬ মার্চ চীনে এক ভাষণে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলো স্থলবেষ্টিত হওয়ায় বাংলাদেশই এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের “অভিভাবক” এবং প্রবেশদ্বার। এ মন্তব্যের জেরে ত্রিপুরার শীর্ষ নেতা প্রদ্যুৎ মাণিক্য দেববর্মা সামাজিক মাধ্যমেই বাংলাদেশের চট্টগ্রাম দখল ও দেশটিকে “ভেঙে দেওয়ার” হুমকি দিয়েছেন।
ত্রিপুরা মোথা পার্টির নেতা প্রদ্যুৎ এক্স (টুইটার)-এ পোস্ট করে দাবি করেন, ১৯৪৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দর পাকিস্তানের হাতে ছেড়ে দেওয়া ভারতের “বড় ভুল” ছিল। তিনি লিখেন, “চট্টগ্রামের পাহাড়ি আদিবাসীরা তখন ভারতের অংশ হতে চেয়েছিল। এখন সেই ভুল সংশোধনের সময় এসেছে।” প্রদ্যুতের বক্তব্যে উঠে এসেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর (ত্রিপুরা, গারো, চাকমা) সমর্থন নিয়ে সমুদ্রপথ দখলের ইঙ্গিত। তিনি আরও যোগ করেন, “সড়ক-রেল নির্মাণে কোটি কোটি রুপি খরচের বদলে বাংলাদেশ ভেঙে সমুদ্রপথ নিয়ন্ত্রণই আমাদের লক্ষ্য।”
ড. ইউনূসের বক্তব্যের প্রথম প্রতিক্রিয়া জানান আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি এক্স-এ লিখেন, এই মন্তব্য ভারতের ‘চিকেনস নেক’ করিডোরের দুর্বলতা উন্মোচন করেছে, যা পাকিস্তান ও চীনের প্রচারণাকে শক্তি দেবে। তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করতে শক্তিশালী রেল-সড়ক নির্মাণের তাগিদ দেন।
ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের মধ্যে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সংবেদনশীল ইস্যুগুলোকে আবারও সামনে এনেছে। বিশেষত চট্টগ্রাম বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক আশঙ্কা এই আলোচনাকে জটিল করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রদ্যুতের হুমকি যদিও প্রতীকী, এটি অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক অস্থিরতাকে ইঙ্গিত করে।