২০২৫ সালে একটি আমেরিকান কোম্পানি, কলোসাল বায়োসাইয়েন্সেস দ্বারা তৈরি জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত মাউস হলো উল্লি মাউস। এই সাফল্য জীববিজ্ঞানে নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
উল্লি মাউস উল্লি ম্যামথ পুনর্জ্জীবিতকরণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে তৈরি করা হয়। এই বিশেষ মাউসগুলোতে ম্যামথের বৈশিষ্ট্য অনুপ্রাণিত জিনগত পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ঘন, লোমশ আবরণ এবং শীত সহনশীলতা।
এই জেনেটিক গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রাচীন প্রাণীদের পুনর্জন্মের সম্ভাবনা অন্বেষণ করা এবং জেনেটিক অভিযোজনের মাধ্যমে প্রাণীদের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বোঝা। কোম্পানিটি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তির মাধ্যমে এশীয় হাতির মধ্যে ম্যামথ-সদৃশ বৈশিষ্ট্য সংযোজনের মাধ্যমে উল্লি ম্যামথ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে, যা তাদের শীতপ্রধান পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা প্রদান করবে।
কোম্পানিটি জানিয়েছে যে, তারা ২০২৮ সালের শেষের দিকে ম্যামথ-সদৃশ বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রথম জেনেটিকালি পরিবর্তিত হাতির শাবক তৈরি করতে চায়। তাদের মতে, ম্যামথের মতো বৈশিষ্ট্যযুক্ত জিনগতভাবে পরিবর্তিত হাতির পাল আর্কটিক বাস্তুতন্ত্রের উপর তাদের প্রভাবের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করতে সাহায্য করতে পারে। কোম্পানির অনুমান অনুসারে, এই প্রাণীগুলি এমনভাবে চরে বেড়াবে যা টুন্ড্রা অঞ্চলে তৃণভূমির বিকাশকে উৎসাহিত করবে এবং পারমাফ্রস্ট গলানো কমাবে, ফলে পারমাফ্রস্ট গলে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস পাবে।
উল্লি মাউস বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে ডিএনএ সংশ্লেষণ, কোল্ড টলারেন্স, এবং বিলুপ্ত প্রজাতির পুনরুজ্জীবন সংক্রান্ত গবেষণায়।
ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের ডেভেলপমেন্টাল জেনেটিক্স ও স্টেম সেল বায়োলজি বিভাগের প্রধান রবিন লোভেল-ব্যাজ উল্লেখ করেন যে, গবেষণাটি জেনেটিক পরিবর্তনের ফলে কীভাবে বিভিন্ন ধরনের লোম তৈরি হয় তা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করেনি, কিংবা পরিবর্তিত মাউসগুলো বাস্তবিকই শীত সহনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে কি না তা প্রমাণ করতে পারেনি। এছাড়া, এটি উল্লি ম্যামথ পুনর্জীবিতকরণের জটিলতা সম্পর্কেও পর্যাপ্ত বিশ্লেষণ প্রদান করেনি। লোভেল-ব্যাজ প্রশ্ন তুলেছেন যে, বিলুপ্ত প্রাণীদের পুনর্জীবিতকরণের জন্য বরাদ্দ অর্থ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতিগুলোর সংরক্ষণে ব্যবহার করা হলে তা বেশি কার্যকর হতে পারে কিনা।
উল্লি ম্যামথ পুনর্জীবিতকরণের প্রচেষ্টা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দুনিয়ায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে পরিচিত হলেও এর প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আরও গভীর বিশ্লেষণ ও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি কিরূপ প্রভাব ফেলবে, তা নির্ভর করবে আমাদের বৈজ্ঞানিক মনোভাব এবং সচেতনতার উপর।