টেস্টোস্টেরন মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন, যা নারী ও পুরুষ উভয়ের শরীরেই থাকলেও পুরুষদের শরীরে এর পরিমাণ অনেক বেশি। এই হরমোন পুরুষদের যৌন সক্ষমতা, পেশি শক্তি, অস্থির ঘনত্ব, মানসিক স্থিতি এবং সার্বিক স্বাস্থ্যে সরাসরি প্রভাব ফেলে।
কেন টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি ঘটে?
টেস্টোস্টেরনের ঘাটতির পেছনে রয়েছে বিভিন্ন কারণ। অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, যেমন ওজন বৃদ্ধি, ঘুমের অভাব ও মানসিক চাপ এই হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। অণ্ডকোষের রোগ, জন্মগত সমস্যা, আঘাত, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ভাইরাসজনিত সংক্রমণও এই ঘাটতির কারণ হতে পারে।
বয়ঃসন্ধিকাল ও টেস্টোস্টেরনের উত্থান
বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়ঃসন্ধিকালে পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। এই সময় থেকেই দাড়ি-গোঁফ, যৌনাঙ্গের বৃদ্ধি, পুরুষালি আচরণ ও অন্যান্য পরিবর্তন দেখা দেয়। গড়পড়তা একজন সুস্থ পুরুষ দিনে প্রায় ৬ মিলিগ্রাম টেস্টোস্টেরন উৎপাদন করে এবং সর্বোচ্চ মাত্রা থাকে ১৭ বছর বয়সে, যা পরবর্তী ২০–৩০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
উপসর্গ ও বিপদ
টেস্টোস্টেরনের ঘাটতির কারণে যৌন ইচ্ছা হ্রাস, অণ্ডকোষ সঙ্কোচন, শুক্রাণুর ঘাটতি, বন্ধ্যাত্ব, ঘুমে সমস্যা, ক্লান্তি, বিষণ্ণতা, হাড় ও পেশির শক্তি হ্রাস, মনোযোগের ঘাটতি, স্তন গঠন এমনকি বিকৃত যৌন আচরণ পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। ঘাটতি দ্রুত দেখা দিলে মানুষ চিকিৎসা নেয়, কিন্তু ধীরে ধীরে হলে এটি অনেক সময় ধরা পড়ে না।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে
বাংলাদেশে সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালের সময় মামস রোগ হলে অণ্ডকোষে সংক্রমণ (অর্কাইটিস) হয়, যা টেস্টোস্টেরনের উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি নজরে আসে না। এ ছাড়া, দীর্ঘ সময় অতিরিক্ত গরমে থাকা, রেডিয়েশনে কাজ করা বা ডায়াবেটিস থাকলেও হরমোনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
যেসব কারণে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি হয় তা যদি জন্মগত বা গুরুতর আঘাতজনিত হয়, তাহলে তার চিকিৎসা সম্ভব নয়। তবে কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করে হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, যেমন—স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, অ্যালকোহল ও মাদক থেকে দূরে থাকা।
এন্ডোক্রাইনোলজিস্টদের মতে, অতিরিক্ত গরম এবং রেডিয়েশন থেকে দূরে থাকা, প্রয়োজনে সুরক্ষা পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। টেস্টোস্টেরনের ঘাটতির একক কোনো চিকিৎসা নেই। এটি উপসর্গভিত্তিকভাবে চিকিৎসা করা হয়। হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির মাধ্যমে কিছু উপসর্গ যেমন যৌন আকাঙ্ক্ষা হ্রাস, বিষণ্ণতা, এবং কর্মক্ষমতার অভাব কিছুটা কমিয়ে আনা যায়, তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া এই চিকিৎসা গ্রহণ করা ঠিক নয়।