বাংলাদেশে শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা সহজতর করতে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল সাইন ভাষার ব্যাংক চালু করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল এবং বাংলাদেশের কমিউনিটি সংগঠন টিম ইনক্লুশন ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছেন মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন টেকনোলজি অনুষদের অ্যাকশন ল্যাবের গবেষক ড. তাসদিক হাসান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা কম। শ্রবণপ্রতিবন্ধী সম্প্রদায়ের জন্য তো বিষয়টি আরও কঠিন, কারণ তাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বোঝাতে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সাইন ছিল না।”
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৬০টিরও বেশি নতুন সাইন ভাষার শব্দ তৈরি করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘মানসিক স্বাস্থ্য’, ‘ডিপ্রেশন’, ‘প্যানিক’, ‘মনোযোগ’ ও ‘মন পরিচর্যা’। প্রতিটি সাইন একটি পেশাদার অনুবাদকের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং বাংলা ও ইংরেজি সাবটাইটেলসহ সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
টিম ইনক্লুশন ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতা জাহিরুল ইসলাম, যিনি নিজেও একজন প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মী, বলেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। এটি শুধুমাত্র গবেষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বাস্তবে কমিউনিটির জন্য প্রযোজ্য একটি টুল।”শ্রবণপ্রতিবন্ধী অংশগ্রহণকারী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা আগে আবেগ প্রকাশ করতে কেবল চারটি শব্দ ব্যবহার করতাম—দুঃখ, আনন্দ, ব্যথা এবং ভালো লাগা। এই প্রকল্প আমাদের শিখিয়েছে, মানসিক স্বাস্থ্য অনেক জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।” পেশাদার সাইন ভাষা অনুবাদক আরাফাত সুলতানা লতা বলেন, “নতুন সাইনগুলো তৈরি করতে গিয়ে আমরা কমিউনিটির সঙ্গে একত্রে কাজ করেছি। প্রতিটি নতুন শব্দ আমাদের বোঝাপড়াকে গভীর করেছে এবং শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়েছে।” প্রকল্পটি মোনাশ অ্যাসিস্টিভ টেকনোলজি অ্যান্ড সোসাইটি সেন্টার এবং অ্যাকশন ল্যাব-এর সহায়তায় পরিচালিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এই উদ্যোগের মূল্যায়ন ও উন্নয়নের জন্য আরও গবেষণা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ৪৩০ মিলিয়ন মানুষ শ্রবণপ্রতিবন্ধী এবং বাংলাদেশে প্রায় ৯.৬ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে শ্রবণ সমস্যায় আক্রান্ত। এই নতুন ডিজিটাল সাইন ব্যাংক শ্রবণপ্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
শব্দহীন এই সমাজের অভিব্যক্তি ও মানসিক অবস্থার কথা বোঝার জন্য সমাজের বাকি অংশেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এই প্রকল্প শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ নয়, বরং এটি একটি সামাজিক আন্দোলনের অংশ যা বাংলাদেশের শ্রবণপ্রতিবন্ধী সম্প্রদায়ের জন্য নতুন ভাষা এবং আত্মপ্রকাশের পথ খুলে দিয়েছে।