বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ১ মে থেকে সারা দেশে ডিম ও মুরগি উৎপাদনকারী সব খামার বন্ধ থাকবে। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
বিবৃতিতে সুমন হাওলাদার অভিযোগ করেন, দেশজুড়ে প্রান্তিক খামারিরা ভয়াবহ লোকসানের মুখে পড়েছেন। গত দুই মাসে ডিম ও মুরগি খাতে মোট ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। রমজান ও ঈদের মৌসুমেও প্রতিদিন ২০ লাখ কেজি মুরগি উৎপাদন করে প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে, যার ফলে এক মাসেই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। একই সময় দৈনিক উৎপাদিত ৪ কোটি ডিমের মধ্যে প্রান্তিক খামারিরা ৩ কোটি ডিম উৎপাদন করেন, যেখানে প্রতি ডিমে ২ টাকা লোকসান হওয়ায় মোট ক্ষতি হয় ৩৬০ কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, সরকারের নীরব ভূমিকার সুযোগে কিছু কর্পোরেট কোম্পানি পুরো পোল্ট্রি খাত দখলের ষড়যন্ত্রে নেমেছে। ফিড, বাচ্চা, ওষুধের পাশাপাশি এখন ডিম ও মুরগির বাজারও নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রান্তিক খামারিদের ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ এর মাধ্যমে দাসত্বে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
বিপিএর পক্ষ থেকে জানানো হয়, আমরা কর্পোরেট দাসত্ব মানব না। যতদিন না সরকার সিন্ডিকেট ভেঙে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে, ততদিন পর্যন্ত খামার বন্ধের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
কর্পোরেট কারচুপির উদাহরণ টেনে সুমন হাওলাদার বলেন, ঈদের আগে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ২৮-৩০ টাকায় উৎপাদিত বাচ্চা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করেছে। এখন সেই বাচ্চা ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লারের উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি ১৬০-১৭০ টাকা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়। ডিমের ক্ষেত্রেও উৎপাদন খরচ ১০-১০.৫০ টাকা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮-৮.৫০ টাকায়। বাজার মূলত কর্পোরেটের নিয়ন্ত্রণে, যার ফলে খামারিরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছে: ১. পোল্ট্রি পণ্যের জন্য জাতীয় মূল্যনিয়ন্ত্রণ নীতিমালা ও নির্ধারণ কমিটি গঠন। ২. কন্ট্রাক্ট ফার্মিং নিষিদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন। ৩. পোল্ট্রি বাজার রেগুলেটরি অথরিটি গঠন। ৪. ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা। ৫. খামারিদের রেজিস্ট্রেশন ও আইডি কার্ড প্রদান। ৬. কোম্পানিগুলোকে কেবল কাঁচামাল উৎপাদনে সীমাবদ্ধ রাখা। ৭. কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এবং কোম্পানির খামার নিষিদ্ধ করা। ৮. কেজি ভিত্তিক ডিম ও মুরগি বিক্রির নীতিমালা প্রণয়ন। ৯. ডিম ও মুরগির রপ্তানির সুযোগ বৃদ্ধি। ১০. পূর্ণাঙ্গ ‘পোল্ট্রি উন্নয়ন বোর্ড’ গঠন।
বিপিএ জানায়, এসব দাবি বাস্তবায়ন না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।