ভারতের আদানি গ্রুপের ঝাড়খন্ডে অবস্থিত ১,৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ৮০০ মেগাওয়াট ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। কারিগরি ত্রুটির কারণে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে এবং দেশজুড়ে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
সরকারি সূত্র জানায়, প্রথম ইউনিটটি ৮ এপ্রিল থেকে বন্ধ হয়ে যায়, এবং দ্বিতীয় ইউনিটটি শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাত ১টার দিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। পিজিসিবি (পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ) এবং বিপিডিবি (বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড) জানিয়েছে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে একসময় ১,৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যেত, তবে বর্তমানে এ থেকে কোনও বিদ্যুৎ আসছে না। শনিবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে একটি ইউনিট থেকে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি জানিয়েছে, সন্ধ্যা ৭টায় গ্রিডে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের পরিমাণ ছিল ৪৬ মেগাওয়াট। ক্রমান্বয়ে ইউনিট-১ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়বে বলে আশা করা যায়।
এদিকে, বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে বিপিডিবি পেট্রোবাংলার কাছে অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহ চেয়ে আবেদন করেছে। জানা গেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি থাকায়, শনিবার (১২ এপ্রিল) বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৪২৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বিদ্যুৎ চাহিদা কম থাকে, তবে আজকের লোডশেডিংয়ের পরিমাণ গত কয়েকদিনের তুলনায় অনেক বেশি বিপিডিবির কর্মকর্তারা জানান, যদি দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় শুরু না হয়, তবে আগামী রোববার থেকে (১৩ এপ্রিল) কাজের দিন শুরু হলে লোডশেডিং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আদানির একটি ইউনিউ সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে চালু হয়েছে। সেখান থেকে বিদ্যুৎ আসছে। তবে আরেকটি ইউনিট কবে নাগাদ চালু হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের কতটুকু ক্ষতি হয়েছে সেটা আমরা দেখিনি। তবে অনুমান করছি সাত দিনের মতো সময় লাগতে পারে।
পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা দিনে প্রায় ১২,৬০০ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় তা ১৩,৮০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত পৌঁছায়। এই অবস্থায় আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহে আরও চাপ পড়েছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিপিডিবি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা করছে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি মেটাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সাশ্রয়ী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।