বাংলাদেশের বইয়ের জগতে এক অবিসংবাদিত নাম—ধ্রুব এষ। দেশের যেকোনো বইয়ের দোকান, প্রকাশনা সংস্থা বা ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায় চোখ রাখলেই দেখা যায়, ধ্রুব এষের প্রচ্ছদ করা বইয়ের ছড়াছড়ি। তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের প্রচ্ছদশিল্পে একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রেখেছেন এই শিল্পী। তাঁর হাতে আঁকা প্রচ্ছদের সংখ্যা ইতোমধ্যে পঁচিশ হাজার ছাড়িয়েছে, যা দেশের শিল্প-সাহিত্যের ইতিহাসে এক অনন্য রেকর্ড।
শিল্পে নিমগ্নতা ও সাধনার প্রতীক
ধ্রুব এষ শুধু প্রচ্ছদশিল্পী নন, তিনি শিল্পের এক সাধক। কৈশোরের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন শিল্পের ভরকেন্দ্র হিসেবে। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ—নিমগ্নতা। কাজের প্রতি প্রেম, মনোযোগ এবং সাধনার জন্যই তিনি আজ বাংলাদেশের প্রচ্ছদ ও অলংকরণ শিল্পের অনন্য দৃষ্টান্ত। তাঁর হাত ধরে প্রচ্ছদশিল্প পেয়েছে নতুন মাত্রা, তৈরি হয়েছে এক নতুন স্কুল, যেখানে সবাই শিক্ষক, সবাই শিক্ষার্থী।
ব্যক্তিত্ব ও জনপ্রিয়তা
নিভৃতচারী ধ্রুব এষকে অনেকে ডাকেন ‘ধ্রুবদা’ নামে। তাঁর ব্যক্তিত্ব ঘিরে নানা গল্প-গুজবও রয়েছে। কেউ বলেন, হুমায়ূন আহমেদ তাঁর ‘মিসির আলী’ বা ‘হিমু’ চরিত্রের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন ধ্রুব এষকে দেখে। আবার শোনা যায়, হুমায়ূন আহমেদ তাঁকে ‘শুভ্র’ নামে ডাকতেন। ধ্রুব এষ কথা কম বলেন, বরং কাজে বিশ্বাসী। তাঁর এই স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বই তাঁকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে সহকর্মী, লেখক, কবি, সাংবাদিক ও সাহিত্যিকদের কাছে।
প্রচ্ছদশিল্পে বিপ্লব ও নেতৃত্ব
ধ্রুব এষের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রচ্ছদশিল্পে এসেছে বিপ্লব। তাঁর স্কুলে শুধু প্রচ্ছদশিল্পী বা আঁকিয়েরা নন, লেখক, কবি, সাংবাদিক, ছড়াকার, শিশু সাহিত্যিক—সকলেই নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে আসেন, শেখেন, অনুপ্রাণিত হন। এই শিল্পী হয়ে উঠেছেন সকলের প্রিয় ‘দাদা’, যিনি বন্ধুত্ব, সহমর্মিতা ও আশ্রয়ের প্রতীক।
জীবন ও কর্ম
১৯৬৭ সালে সুনামগঞ্জের উকিলপাড়ায় জন্ম নেওয়া ধ্রুব এষের বাবা ভূপতি এষ ও মা লীলা এষ। শিল্পের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও একাগ্রতা তাঁকে দেশের অপরিহার্য প্রচ্ছদশিল্পীতে পরিণত করেছে। তিন দশকে তিনি এঁকেছেন প্রায় বিশ হাজার প্রচ্ছদ। শুধু প্রচ্ছদ নয়, লেখালেখিতেও সমান দক্ষ ধ্রুব এষ। ছোটদের জন্য হোক বা বড়দের জন্য—সব বয়সি পাঠকের কাছে তাঁর লেখা সমানভাবে আকর্ষণীয়। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪০।
ভবিষ্যতের দিকে
ধ্রুব এষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অগণন। শিল্পের ভুবনে তাঁর কর্মময়তায় জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন মিথ। বাংলাদেশের প্রচ্ছদশিল্পের ইতিহাসে ধ্রুব এষ হয়ে থাকবেন এক অনন্য কিংবদন্তি, যিনি নিজের সাধনা, নেতৃত্ব ও ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তুলেছেন শিল্পের এক নতুন দিগন্ত।