সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বর্তমান প্রেক্ষাপটে, যেখানে গোপনীয়তা লঙ্ঘন, সাইবার বুলিং এবং অনৈতিক কনটেন্টের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে, ঠিক সেই সময় একদল উদ্ভাবনী ও নৈতিক চিন্তায় বিশ্বাসী বাংলাদেশি প্রযুক্তি উদ্যোক্তা নিয়ে এসেছেন নতুন এক বিকল্প—‘হিকমাহ’।
এই নতুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি শুধু ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষা করাই নয়, বরং অনলাইনে ইতিবাচকতা ছড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর পেছনের দুই মুখ্য উদ্যোক্তা হলেন ওমর আল জাবির এবং নিজাম উদ্দিন। ওমর আল জাবির, যিনি মেটা (ফেসবুক)-এর সাবেক ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার ছিলেন, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক টেক ইন্ডাস্ট্রিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি টেসকো ও ব্রিটিশ টেলিকমের মতো প্রতিষ্ঠানেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
নিজাম উদ্দিন, হিকমাহ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, বাংলাদেশের অন্যতম সফল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান weDevs-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও পরিচিত। নৈতিক ডিজিটাল উদ্যোগে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
এই উদ্যোক্তা দলটি শুধু হিকমাহ-তেই থেমে থাকেনি। তারা চালু করেছে আরও দুটি প্ল্যাটফর্ম। মাহফিল, ইউটিউবের বিকল্প একটি ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম, যা সম্পূর্ণরূপে নৈতিক মানদণ্ড মেনে পরিচালিত হয় এবং কাহফ কিডজ, শিশুদের জন্য ডিজাইনকৃত একটি নিরাপদ ডিজিটাল স্পেস, যেখানে কোনো প্রকার অনুপযুক্ত কনটেন্ট প্রবেশ করতে পারে না। এটি শিশু এবং অভিভাবক উভয়ের জন্যই নিরাপদ একটি অনলাইন অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
হিকমাহ-এর পাবলিক রিলেশনস ম্যানেজার মোঃ আহনাফ আহমিদ সাদ বলেন, “আমরা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম গড়তে চেয়েছি, যেখানে মানুষ ভয়হীনভাবে নিজের চিন্তা ও ভাবনা প্রকাশ করতে পারে—কোনো ঘৃণা, হয়রানি বা ভুয়া তথ্য ছাড়াই।” আল আমিন শাহরিয়ার, মাহফিল-এর সিইও, বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য এমন একটি ডিজিটাল পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার নৈতিকতা হারাবে না।” কাহফ কিডজ-এর প্রোডাক্ট ম্যানেজার নাহিদ ইসলাম নিরব যোগ করেন, “এই প্ল্যাটফর্মটি বিশেষভাবে শিশুদের এবং তাদের অভিভাবকদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যেন ইন্টারনেট ব্যবহার আরও নিরাপদ ও শিক্ষণীয় হয়।” বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. আশিকুর রহমান এই উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “সরকার যদি বাংলা ভাষার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বড় ভাষাভিত্তিক মডেল (LLM)-এ বিনিয়োগ করে, তাহলে এআই খাতে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে পারবে।”
যখন বৈশ্বিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহারকারীদের জন্য অনিরাপদ ও অস্থির হয়ে উঠছে, তখন বাংলাদেশি প্রযুক্তিবিদদের এই উদ্যোগগুলো এক টেকসই, নৈতিক এবং নিরাপদ ডিজিটাল ভবিষ্যতের আশ্বাস দেয়।
এই পদক্ষেপ শুধু দেশের প্রযুক্তি খাতে নয়, বরং সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষার দিকেও এক সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।