ভূমিকম্পের ভয়াবহতায় যখন চারদিক ধ্বংসস্তূপে পরিণত, তখন নিজের পরিবারকে বাঁচাতে ৬০০ ফুট গভীরতা থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার এক বাবা কওন ইয়ং জুন। থাইল্যান্ডের ব্যাংককের একটি বহুতল ভবনে থাকাকালীন এই ভয়ানক ঘটনাটি ঘটে। এখন তার এই সাহসিকতা সারা বিশ্বে আলোচিত হচ্ছে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) মিয়ানমারে আঘাত হানা ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ৩ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এই ভূমিকম্পের প্রভাব পড়ে থাইল্যান্ডেও। কওন তার স্ত্রী সুকান্যা ইউতুয়াম ও শিশু সন্তানসহ ব্যাংককের পার্ক অরিজিন থংলোর কনডোমিনিয়ামের ৫২তম তলায় অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ ভবনটি প্রবলভাবে কেঁপে ওঠে এবং সংযোগকারী একটি ওয়াকওয়ে ভেঙে পড়ে।
পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার কথা ভেবে কওন কোনো দ্বিধা না করে ৬০০ ফুট নিচে ঝাঁপ দেন। সৌভাগ্যক্রমে তিনি মাত্র হালকা আঘাত পেয়ে বেঁচে যান। পরে জানতে পারেন, তার স্ত্রী ও সন্তান ইতিমধ্যেই নিরাপদে বেরিয়ে গেছেন।
এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। অনেকেই তাকে ‘নিঃস্বার্থ সাহসী পিতা’ বলে প্রশংসা করেন, আবার কেউ কেউ একে ‘অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি’ বলে উল্লেখ করেন। রেডিট ও বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ঘটনাটি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে।
মিয়ানমারে এই ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) আশঙ্কা করছে, মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। থাইল্যান্ডেও অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুই দেশে ১,২০০-এর বেশি বাড়িঘর, স্কুল, হোটেল ও ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে।
উদ্ধারকার্য ধীরগতিতে চললেও চীন, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তা আসতে শুরু করেছে। এই দুর্যোগে একদিকে যেমন প্রাণহানির মর্মান্তিক খবর আসছে, তেমনি কওনের মতো মানুষের সাহসিকতা মানুষের হৃদয় স্পর্শ করছে।
তবে এই ঘটনার পর থাইল্যান্ডের ভবনগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংককের ৯০ শতাংশ ভবন ভূমিকম্প প্রতিরোধী নয়, বিশেষ করে পুরনো ভবনগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
একদিকে বেঁচে যাওয়ার স্বস্তি, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা—এই দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন কওন ও তার পরিবারসহ হাজারো মানুষ, যারা এই ভয়াবহ দুর্যোগ প্রত্যক্ষ করেছেন।