ইসরায়েলি বিমানবাহিনী গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিমান হামলা চালিয়েছে। বুধবার (২ এপ্রিল) সকালে সংঘটিত এই নৃশংস হামলায় অন্তত ২২ জন ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৯ জন শিশু, ৬ জন নারী এবং ৭ জন বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছেন বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। আহতদের সংখ্যা প্রায় ৪০ জন হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
হামলাটি ঘটেছে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের নিকটবর্তী ইউএনআরডব্লিউএ (UNRWA) পরিচালিত আল-ফাখুরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হামলার সময় কেন্দ্রটিতে প্রায় ১৫০ জন বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিক আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইসরায়েলি বিমান থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি ভবনটিকে আঘাত করায় তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। হামলার তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে ভবনটিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়, যার ফলে অনেক নিহতের দেহ পুড়ে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) হামলার দায় স্বীকার করে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে যে, হামাসের জাবালিয়া ব্যাটালিয়নের সদস্যরা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি থেকে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তবে তারা এই দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। আইডিএফের মুখপাত্র বলেন, “আমরা নিশ্চিত যে সন্ত্রাসীরা বেসামরিক স্থাপনা ব্যবহার করছিল, তাই আমরা লক্ষ্যটিকে আঘাত করতে বাধ্য হয়েছি।”
অন্যদিকে, হামাস এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা আখ্যায়িত করে এক বিবৃতিতে বলেছে, “ইসরায়েলি দাবিগুলো তাদের যুদ্ধাপরাধকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য উদ্ভট মিথ্যাচার মাত্র।” সংগঠনটির মুখপাত্র আরও যোগ করেন, “এই হামলা ফ্যাসিবাদী নেতানিয়াহু সরকারের মানবতা ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি চরম অবজ্ঞাকেই প্রতিফলিত করে।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই হামলাকে “স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ” আখ্যায়িত করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই হামলা শুধু একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধ্বংস করেনি, বরং গোটা মানবতাকে আঘাত করেছে।” জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জরুরি নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠক ডেকেছেন।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলন এক বিবৃতিতে বলেছে, “চিকিৎসা কেন্দ্রে হামলা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের চরম লঙ্ঘন।” সংস্থাটি আহতদের জন্য জরুরি চিকিৎসা সরবরাহের ব্যবস্থা করছে। তুরস্ক, সৌদি আরব, মিসরসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশ এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে “সব পক্ষকে সংযত হওয়ার” আহ্বান জানালেও সরাসরি ইসরায়েলের নিন্দা করেনি।