চার বছরের সংগীত–যাত্রার পর হঠাৎই থেমে গেল ব্যান্ড ‘কাকতাল’। ‘চরকি’, ‘সোডিয়াম’, ‘গোলকধাঁধা’, ‘মায়া’, ‘নস্টালজিয়া’—তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় এসব গানের স্রষ্টারা ১৭ মে ফেসবুকে এক আবেগঘন বার্তায় ঘোষণা করেন, আর কোনো কার্যক্রম চালাবেন না। তারা লেখে, শ্রোতাদের অফুরন্ত ভালোবাসায় চার বছরের দুর্দান্ত পথচলা সম্ভব হয়েছিল, কিন্তু “যেই শান্তির খোঁজে যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেটিই হারিয়ে যাচ্ছে”—এ কারণেই বিরতি নয়, সমাপ্তি টানছে ব্যান্ডটি।
কাকতালের জন্মই ছিল কাকতালীয় ঘটনা। ভোকালিস্ট ও গীতিকার আসিফ ইকবাল অন্তু কারাবন্দি অবস্থায় প্রায় দুই–আড়াই শ গান কম্পোজ করেন। কারা কর্তৃপক্ষ সৃজনশীল পুনর্বাসন কর্মসূচি শুরু করলে কারাগারে বাদ্যযন্ত্র আনা হয়, আর ‘মননচর্চা’ নামে অন্তুর সংগঠন বন্দিদের সৃজনশীলতাকে উসকে দেয়। সেই প্রক্রিয়া থেকেই গড়ে ওঠে ‘কাকতাল’।
২০২১ সালে অন্তুর মুক্তির পর স্বাধীনভাবে পথচলা শুরু করে ব্যান্ডটি। স্থায়ী লাইনআপে ছিলেন—আসিফ ইকবাল অন্তু (ভোকাল ও গিটার), নাজেম আনোয়ার (বাঁশি), অ্যালেক্স জোভেন (ড্রামস ও পারকাশন), সৌম্য অনিন্দ্য ঋদ্ধ (বেস গিটার); সঙ্গে ছিলেন অন্তর ও জাভেদ। মিনিমালিস্ট সাউন্ড আর আরবান লিরিকে গড়া কাকতালের গান স্বল্প সময়ে গড়ে তোলে অনুরাগীদের বিশাল কোলাজ।
কিন্তু হঠাৎ ঘোষিত ‘কাকতাল’-এর বিদায় মেনে নিতে পারছেন না শ্রোতারা। তাদের মতে, “কাকতাল কোনো ব্যান্ড নয়, ভেজা কাকের পরিবার”। ভক্তদের হৃদয়ে তারা শিখিয়ে গেল—“টু লাভ ইজ টু লেট গো”; ভালোবাসলে প্রিয়কে মুক্তিই দিতে হয়। তাই কাকতাল হারিয়ে গেলেও থেকে যাবে স্মৃতির সুবাসিত বেলির মতো।
নামের রহস্যও এক কাকতালীয় গল্প। অন্তু বলেছিলেন, পুরো যাত্রাই পরিকল্পনাবিহীন; সবকিছু জুড়ে বসেছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে, যেন কাঙ্ক্ষিত শান্তির পাখি হঠাৎ ডালে এসে বসেছে। সেই কাকতালীয় জন্মের মতোই বিদায়টাও কাকতালীয়—অনির্ধারিত, অনিশ্চিত, তবু অপূর্ব। হয়তো আবার কোথাও দেখা হবে, তখন কাকতালই জিজ্ঞেস করবে, “কেমন আছো?”