চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াং ঘোষণা করেছেন যে, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরও বাংলাদেশ চীনের বাজারে আরও দুই বছর শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাবে। এর ফলে ২০২৮ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা বহাল থাকবে। বাংলাদেশ চীনা কোম্পানিগুলোকে এদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে।
২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটাবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র এলডিসি-উত্তর তিন বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখবে, তবে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত এ বিষয়ে এখনও কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। কানাডাও একই সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কার্যকরের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি পরিবর্তন এখনো আনেনি।
চীনের ২০২২ সালে বাংলাদেশকে ৯৯% পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও, বাংলাদেশ এই সুযোগ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। বরং, দেশটিতে রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুসারে, ২০২২-২৩অর্থবছরে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি ৬৭৭ মিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৬৮৩ মিলিয়ন ডলার।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষক ও র্যাপিড-এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম এ রাজ্জাক মনে করেন, বাংলাদেশের সক্ষমতা না থাকায় চীনের দেওয়া শুল্কমুক্ত সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য চুক্তি (FTA) স্বাক্ষরের মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধা দীর্ঘায়িত করা যেতে পারে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) নীতি অনুযায়ী, উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে FTA স্বাক্ষর করতে হলে ৯৯% পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে হয়, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যেহেতু চীন এখনো উন্নয়নশীল দেশ, তাই বাংলাদেশ আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (BIDA) তথ্যমতে, বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ কমছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীনের বিনিয়োগ ছিল ১.১৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট বিনিয়োগ ১.২৫ বিলিয়ন ডলার। চীনা কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্কারোপের কারণে অন্য দেশে বিনিয়োগ স্থানান্তর করছে।
বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চাইনিজ ইকোনমিক জোন স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। চীনের বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
২০২৫ সাল থেকেই বাংলাদেশ থেকে চীনে আম রপ্তানি শুরু হবে। এছাড়া, চীন কাঁঠাল, পেয়ারা ও অন্যান্য জলজ পণ্য আমদানি করতেও আগ্রহী। এতে বাণিজ্য ভারসাম্যের বিশাল ব্যবধান কমানোর সুযোগ রয়েছে।
চীন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি স্কলারশিপ প্রদান করবে। ইতোমধ্যেই হাজার হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনা করছে।
চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জন্য চারটি সমুদ্রগামী জাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন।
ডিং শুয়েশিয়াং জানান, চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সংলাপ পরিচালনা করবে।
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এই বৈঠক বাংলাদেশ-চীন অংশীদারিত্বের একটি নতুন মাইলফলক চিহ্নিত করেছে। তিনি কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার ও পারস্পরিক অংশীদারিত্বের নতুন যুগ সূচনা করার আহ্বান জানান।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।