ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা চার দিনের বৃষ্টিপাতে শেরপুর জেলার নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেলেও বুধবার (২১ মে) রাত থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর মানুষের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। যে কোনো সময় নতুন করে বৃষ্টি শুরু হলে বাঁধ ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
মঙ্গলবার চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হলেও বুধবার সকাল থেকে তা বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার নিচে নেমে এসেছে। সকাল ৯টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ভোগাই নদীর পানি নকুগাঁও পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭৯ সেন্টিমিটার, নালিতাবাড়ি পয়েন্টে ২৪৬ সেন্টিমিটার, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ৬৩৭ সেন্টিমিটার এবং চেল্লাখালী নদীর বাতকুচি পয়েন্টে ৭৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গতবারের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি অনেক পরিবার। সেবারও বাঁধ ভেঙে বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড সময়মতো সংস্কার না করে বর্ষার ঠিক আগে কাজ শুরু করে, ফলে অধিকাংশ জায়গায় কাজ অসম্পূর্ণ থেকে গেছে এবং ফাটল দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার মহারশি নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ঝিনাইগাতী উপজেলার দীঘিরপাড় এলাকায় নদীতীরবর্তী বাঁধে ফাটল দেখা দেয়, যার দ্রুত মেরামত প্রয়োজন।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এখনো জেলায় প্রায় ৮ শতাংশ ধান জমিতে রয়ে গেছে এবং অনেক ধান ও খড় এখনো মারাই হয়নি বা ঘরে তোলা সম্ভব হয়নি। টানা বৃষ্টিতে কাটা ধান ও খড় পচে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। উপরন্তু, নীচু এলাকাগুলোতে পানিতে জোঁকের উপদ্রবও কৃষকদের সমস্যায় ফেলেছে। ধান কাটতে গিয়ে শ্রমিক সংকট তৈরি হয়েছে, সময় বেশি লাগছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হুমায়ূন আহমেদ বলেন, “পানি আসলে কিছু কাজ শুরু হয়, পরে আর কেউ মনে রাখে না। এখন আবার সেই পুরনো ভয় ফিরে এসেছে।” অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবক আতিকের মতে, “প্রতি বছর আমরা নিজেরা বাঁধে মাটি ফেলে রক্ষা করি। স্থানীয়ভাবে বাঁধের স্থায়ী সমাধান না হলে পাশে থাকা দীঘিরপাড় ফাজিল মাদ্রাসাটিও ঝুঁকিতে পড়বে।”
পাগলা নদীর তীরবর্তী কৃষকরাও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, ধান গাছেই পচে যাচ্ছে, সিদ্ধ করার কোনো উপায় নেই। পাশাপাশি গরুর খাবারের সংকটও আসন্ন, কারণ খড়ও নষ্ট হচ্ছে।
এ অবস্থায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন জানান, “জেলার ৯২ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। যদি দ্রুত মাঠে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন নামানো যেত, তাহলে আরও দ্রুত ধান কাটা সম্ভব হতো। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কাটা ধান শুকিয়ে ঘরে তোলা।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখিনুজ্জামান বলেন, “পানি আজ কমেছে। ভারতের দুটি প্রদেশে ও আমাদের এলাকায় টানা বৃষ্টির ফলেই পানি বেড়েছিল। আমরা বাঁধগুলোর ওপর নিয়মিত নজর রাখছি এবং জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য বালুর বস্তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম জানান, “সরকারি নির্দেশনায় স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে আমরা জরুরি সভা করেছি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় সহায়তার আবেদন করা হয়েছে এবং খুব দ্রুত তা পাওয়া যাবে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”