লং কোভিড বলতে বোঝায়—কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার পরও যখন শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ দীর্ঘদিন ধরে রয়ে যায় বা নতুন করে দেখা দেয়। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যজটিলতা, যা করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর শরীরে তৈরি হওয়া সম্ভাব্য অটোইমিউন প্রতিক্রিয়ার ফলেও হতে পারে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার এক বা একাধিক বছর পরও অনেকে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। অর্থাৎ, কোভিড কেবল স্বল্পমেয়াদী একটি সংক্রমণ নয়—এর পরবর্তী প্রভাব দীর্ঘ সময়জুড়েই শরীরে সক্রিয় থাকতে পারে।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
গবেষণা বলছে, কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে লং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে বেশি:
তীব্র কোভিডে আক্রান্ত হওয়া নারী, বিশেষ করে যারা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই কমে গেছে।
যাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ফুসফুসজনিত অসুস্থতা রয়েছে, কিংবা যারা কোভিড টিকা নেননি—তাঁদের মধ্যেও লং কোভিডের ঝুঁকি অনেক বেশি।
লং কোভিডের লক্ষণ কীভাবে বুঝবেন?
লং কোভিড নির্ণয়ের জন্য বর্তমানে নির্দিষ্ট কোনো ল্যাব টেস্ট নেই। এটি সাধারণত রোগীর উপসর্গ ও ইতিহাসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়। নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে কিছু লক্ষণ ভিন্ন হতে পারে:
নারীদের মধ্যে সাধারণ লক্ষণ:
অতিরিক্ত চুল পড়া
হজম বা পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা
চোখে শুষ্কতা
স্বাদ ও ঘ্রাণের অনুভূতি কমে যাওয়া
পুরুষদের মধ্যে:
তুলনামূলকভাবে যৌন দুর্বলতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে
নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে:
মনোযোগে ঘাটতি
ভুলে যাওয়ার প্রবণতা (ব্রেইন ফগ)
মাথাব্যথা
হাত-পা কাঁপা
হার্টবিট বেড়ে যাওয়া
দাঁড়ালে মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানো
এই উপসর্গগুলো কোভিড সেরে ওঠার কিছুদিন পর, কিংবা কয়েক মাস বা এমনকি বছর পার করেও দেখা দিতে পারে।
নারীরা বেশি আক্রান্ত কেন?
গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮-৩৯ বছর বয়সী নারীদের লং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা পুরুষদের তুলনায় প্রায় ১.০৪ গুণ বেশি। মেনোপজ-পরবর্তী নারীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেড়ে দাঁড়ায় ১.৪৫ গুণে। ৪০-৫৪ বছর বয়সী নারীরা পুরুষদের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বেশি আক্রান্ত হন। এর অন্যতম কারণ হতে পারে হরমোনজনিত পরিবর্তন, বিশেষ করে এস্ট্রোজেনের ঘাটতি।
এ কারণে বিজ্ঞানীরা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT) এবং সামান্য মাত্রায় টেস্টোস্টেরন প্রয়োগের সম্ভাবনাও বিবেচনা করছেন, যদিও এসব পদ্ধতির কার্যকারিতা সম্পর্কে এখনো পর্যাপ্ত প্রমাণ মেলেনি।
লং কোভিডের চিকিৎসা
লং কোভিডের কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। উপসর্গ অনুসারে চিকিৎসা দেওয়া হয়:
ওষুধ প্রয়োগ: মাথাব্যথা, ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা বা বিষণ্ণতা অনুযায়ী উপযুক্ত ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
স্টেলেট গ্যাংলিয়ন ব্লক (SGB): স্নায়বিক উত্তেজনা কমাতে বিশেষ ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়, যা কিছু ক্ষেত্রে উপসর্গ প্রশমনে কার্যকর।
ফিজিওথেরাপি: দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক দুর্বলতা বা ব্যথার চিকিৎসায় সহায়তা করে।
পালমোনারি রিহ্যাবিলিটেশন: শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য শ্বাসপ্রশ্বাস অনুশীলন ও থেরাপি।
মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা: উদ্বেগ, হতাশা বা মানসিক অস্থিরতার ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপি ও কাউন্সেলিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।