স্মার্টফোন নতুন হোক বা পুরাতন, একটি সাধারণ সমস্যার মুখে সবাই পড়েন—ব্যাটারি ও ডেটা দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়া। অনেক সময় ফোন চার্জ দিয়েই হাতে নেওয়ার আগেই ব্যাটারি কমতে শুরু করে। একইভাবে অল্প সময়ে শেষ হয়ে যায় ইন্টারনেট ডেটা। এর জন্য মূলত দায়ী কিছু নির্দিষ্ট অ্যাপ ও অভ্যাস, যেগুলো ব্যবহারকারীর অজান্তেই ফোনের শক্তি খরচ করে।
ব্যাকগ্রাউন্ডে সচল থাকা অ্যাপ
অনেক অ্যাপ আছে যেগুলো সরাসরি ব্যবহার না করলেও ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ চালিয়ে যায়। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া, নিউজ অ্যাপ বা ই-মেইল সেবাগুলোর মত অ্যাপ সার্ভারের সঙ্গে বারবার তথ্য আদান-প্রদান করে, ফলে ডেটা খরচ বাড়ে। কিছু অ্যাপ আবার ‘ক্যাশে’ ডেটা জমিয়ে রাখে বা ‘প্রিফেচিং’ পদ্ধতিতে আগেভাগে তথ্য ডাউনলোড করে নেয়, যা ব্যাকগ্রাউন্ডে ব্যাটারি ও ডেটা উভয়ই খরচ করে।
লোকেশনভিত্তিক অ্যাপের সক্রিয়তা
গুগল ম্যাপস বা ওয়েজের মতো নেভিগেশন অ্যাপ ব্যবহার করলে নিয়মিত লোকেশন আপডেট হয়। এতে স্যাটেলাইট ও মোবাইল টাওয়ারের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করতে হয়, ফলে দ্রুত ব্যাটারি ফুরায় এবং ডেটা ব্যয় বেড়ে যায়। যানজট বা দুর্ঘটনার তাৎক্ষণিক আপডেট পেতে এসব অ্যাপ সার্বক্ষণিক সক্রিয় রাখলে খরচ আরও বাড়ে।
ভিপিএন ব্যবহারে ডেটা খরচ বৃদ্ধি
ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে অনেকে ভিপিএন ব্যবহার করেন। তবে এতে প্রতিটি তথ্য এনক্রিপ্ট করে পাঠাতে হয়, যার ফলে ডেটা খরচ প্রায় ৪ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত এনক্রিপশন ও প্রসেসিংই ডেটা ব্যয়ের মূল কারণ।
পুশ নোটিফিকেশনের চাপে ব্যাটারি ও ডেটা ক্ষয়
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন অ্যাপ নিয়মিত পুশ নোটিফিকেশন পাঠায়। এদের অনেকেই ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থেকে প্রসেসরে চাপ তৈরি করে এবং ডেটাও খরচ করে। জিমেইল বা নিউজ অ্যাপেও একই প্রবণতা দেখা যায়।
স্ট্রিমিং অ্যাপের অতিরিক্ত ডেটা খরচ
ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, ডিজনি+ বা স্পটিফাইয়ের মতো স্ট্রিমিং অ্যাপ ডেটা খরচের দিক থেকে শীর্ষে। বিশেষ করে স্পটিফাই ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকেও লাইব্রেরির সঙ্গে সিঙ্ক রাখে, যা ডেটা ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। একটি গানের মান অনুযায়ী সেটি ০.৭২ এমবি থেকে ৯.৭ এমবি পর্যন্ত ডেটা ব্যবহার করতে পারে। তবে ‘ডেটা সেভার’ মোড চালু রাখলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
ক্ষতিকর অ্যাপের গোপন অপারেশন
গুগল প্লে স্টোরের কড়া নিরাপত্তা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর অ্যাপ ঢুকে পড়ে। শুরুতে সাধারণ মনে হলেও এসব অ্যাপ পরবর্তীতে চুপিসারে ডেটা ও ব্যাটারি খরচ করে। ব্যবহারকারীর অজান্তেই তারা নানা ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যায়।
অতএব, ফোনের ডেটা ও ব্যাটারির খরচ কমাতে এসব বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। সময়মতো অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ বন্ধ রাখা, লোকেশন ও নোটিফিকেশন নিয়ন্ত্রণ, এবং সন্দেহজনক অ্যাপ এড়িয়ে চলা—এসব অভ্যাসই হতে পারে কার্যকর সমাধান।