এক ঠিকানায় সব সরকারি সেবা পৌঁছে দিতে বাংলাদেশে চালু হচ্ছে নতুন ডিজিটাল সেবা আউটলেট ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’, সংক্ষেপে ‘নাগরিক সেবা’। এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করছে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়। ৩০ এপ্রিল (বুধবার) গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি জানান, ১ মে থেকে ব্যক্তি উদ্যোক্তারা নাগরিক সেবা কেন্দ্র পরিচালনার জন্য আবেদন করতে পারবেন। চলমান ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোকে এই সেবার আওতায় আনা হবে। আগ্রহী উদ্যোক্তারা www.nagoriksheba.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন।
শুরুতে প্রায় ১০০টি সরকারি সেবা নাগরিকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে কমপক্ষে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা ‘নাগরিক সেবা’ কিয়স্কে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, ডেটা গভর্নেন্স এবং ন্যাশনাল ইন্টার-অপারেবিলিটি ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া দ্রুততর হবে।
এই সেবার মাধ্যমে নাগরিকদের আর সরকারি বা আধা-সরকারি অফিসে যেতে হবে না। অনলাইনে করা আবেদন ট্র্যাকিং নম্বরসহ সরাসরি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌঁছে যাবে। এটি বাস্তবায়ন করবে একটি শক্তিশালী ও নিরাপদ ন্যাশনাল সার্ভিস বাস, যা মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে ইন্টার-অপারেবিলিটি নিশ্চিত করবে।
প্রস্তাবিত ডেটা গভর্নেন্স অ্যান্ড ইন্টার-অপারেবিলিটি অথরিটি তথ্য আদান-প্রদান, গোপনীয়তা এবং সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে একটি সিঙ্গেল সার্ভিস পোর্টাল ও সুপার অ্যাপ তৈরি করা হবে, যেখানে থাকবে সব সেবার একক প্রবেশদ্বার, বিলিং ও পেমেন্ট গেটওয়ে।
‘নাগরিক সেবা’ কেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের জন্য থাকবে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডিং, ইউনিফর্ম, পরিচয়পত্র ও সরকার প্রদত্ত সনদ। উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। উদ্যোক্তাদের সহায়তায় প্রশিক্ষণ ও যাচাই-বাছাই শেষে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে ৪টি কম্পিউটার, ফার্নিচারসহ প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করবে সরকার।
প্রাথমিকভাবে সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়, পোস্ট অফিস, বিটিসিএল অফিস ইত্যাদিতে কো-ওয়ার্কিং স্পেস তৈরি করে নাগরিক সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। পরবর্তী পর্যায়ে উদ্যোক্তারা নিজ ঘরে বসেই এজেন্ট হিসেবে ডিজিটাল সেবা প্রদান করতে পারবেন। এখানেই ‘ভিলেজ ফোন লেডি’ ধারণার অনুকরণে গড়ে উঠবে ‘সিটিজেন সার্ভিস পার্সন’ বা ‘সিটিজেন সার্ভিস লেডি’ মডেল।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ সহজ হওয়ার পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি হবে। এটি শুধুই সেবা নয়, বরং একটি জনমুখী ডিজিটাল আন্দোলন, যার মাধ্যমে নাগরিক সেবাকে অফিস থেকে বের করে আনা হচ্ছে জনগণের নিকটবর্তী করে।
নাগরিক সেবার আওতায় যেসব সেবা পাওয়া যাবে, তার মধ্যে রয়েছে:
জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন
আইডি সংশোধন ও পুনর্মুদ্রণ
ভূমি সংক্রান্ত সেবা, সিঙ্গেল ল্যান্ড সার্ভিস গেটওয়ে
পাসপোর্টের আবেদন ও নবায়ন
অনলাইন জিডি, আয়কর রিটার্ন, ভ্যাট চালান আবেদন
ট্রেড লাইসেন্স ও ট্রেডমার্ক আবেদন
সামাজিক সুরক্ষা ভাতা ও অনুদানের আবেদন
বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসসহ ইউটিলিটি সেবা
ড্রাইভিং লাইসেন্স ও যানবাহন রেজিস্ট্রেশন
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি সেবা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল সেবা।
উদ্যোক্তা হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আগ্রহীদের nagoriksheba.gov.bd ওয়েবসাইটে আবেদন করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রক্রিয়াটি হবে সহজ, দ্রুত এবং সম্পূর্ণ ডিজিটাল।