বলা হয়, জেল মানুষকে পরিশুদ্ধ করে—আত্মিক ও ব্যক্তিগতভাবে। কেউ এই বন্দিদশা থেকে শিক্ষা নিয়ে ফিরে আসে সুপথে, আবার কেউ আরও কঠিন হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের এমন এক বিতর্কিত তারকা হলেন গায়ক মইনুল আহসান নোবেল, যিনি ব্যক্তিগত নানা কারণে প্রায়ই থাকেন আলোচনার কেন্দ্রে। বর্তমানে নারী নির্যাতন মামলায় তিনি রয়েছেন কারাগারে।
তবে ঈদের আনন্দ থেকে বাদ যাননি তিনি। শনিবার, ৭ জুন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে আয়োজিত হয় এক বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে অন্যান্য বন্দিদের সঙ্গে অংশ নেন নোবেলও। তিনি মঞ্চে উঠে পরিবেশন করেন নগর বাউল জেমসের বিখ্যাত গান ‘জেল থেকে বলছি’। এছাড়াও তিনি গেয়েছেন নিজের জনপ্রিয় গান—‘অভিনয়’, ‘ভিগি ভিগি’, ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে’সহ আরও কিছু গান। নোবেলের কণ্ঠে এসব গান শুনে অন্য বন্দিরাও আনন্দ-আবেগে মেতে ওঠেন, কারাগারের মাঠজুড়ে তৈরি হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
জেলের জীবন সহজ নয়—এই অভিজ্ঞতা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই বোঝে। ঈদের মতো আনন্দঘন দিনে সেই বন্দি জীবন হয়ে ওঠে আরও কষ্টকর। তবে এমন মুহূর্তে গান কিংবা বিনোদনের মাধ্যমে একটু স্বস্তি এনে দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে নোবেল যেন বন্দিদের জীবনে এক ঝলক ‘আশা’ জাগিয়ে তোলেন। এটি অনেকটা ১৯৯৪ সালের বিখ্যাত সিনেমা The Shawshank Redemption-এর এক দৃশ্যের মতো, যেখানে জেলের ফ্যাক্টরির ছাদে কয়েদিরা একসঙ্গে বিয়ার পান করে খানিক আনন্দ পায়। যদিও বাস্তবে তা অসম্ভব, তবে ওই দৃশ্যটি ‘আশা’-র প্রতীক হিসেবেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল।
নোবেলের গান হয়তো সেই একই বার্তা বহন করেছে—আশা, ভালোবাসা, পরিবর্তন। ঈদের দিনে এই আয়োজন ছিল মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
তবে নোবেল যে কারণে বর্তমানে কারাগারে—সেই প্রসঙ্গও উল্লেখযোগ্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার একটি মারধরের ভিডিও ভাইরাল হয়। ভুক্তভোগীর পরিবারের ৯৯৯ নম্বরে কল করার পর ডেমরা থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। পরে নোবেলের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
এখন দেখার বিষয়, বন্দি জীবনের এই অধ্যায় থেকে নোবেল কতটা শিখে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে ফিরে আসতে পারেন তার গানের ভুবনে। তার ভক্তরা হয়তো সে আশাতেই অপেক্ষায় আছেন।