প্রযুক্তি যতই উন্নত হচ্ছে, মানুষের সক্ষমতার সীমা越 তা ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। এমনই একটি উদাহরণ হচ্ছে কৃত্রিম নাক, যা এখন মানুষের মতো গন্ধ শনাক্ত করতে পারে। একদম মানুষের নাকের মতো গন্ধ বুঝতে সক্ষম এই প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে AI এবং ন্যানো-স্কেল সেন্সর ব্যবহার করে। এর উদ্ভাবন যেন প্রযুক্তির দুনিয়ায় একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে।
এই কৃত্রিম নাকের মূলে রয়েছে একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এটি বাতাস থেকে গন্ধের অণু শনাক্ত করে, তারপর সেই অণুগুলোকে ইলেকট্রনিক সিগন্যাল-এ রূপান্তরিত করে। এই সিগন্যাল AI মডেলকে বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে। AI মডেলটি মানুষের মতো গন্ধের প্যাটার্ন চিনে, তাকে শনাক্ত করে এবং সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারে কোন গন্ধটি কিসের। প্রযুক্তিটির মৌলিক ভিত্তি হলো “কম্বিনেটোরিয়াল কডিং”, যা আমাদের শারীরিক গন্ধ শনাক্তকরণের প্রক্রিয়াকে অনুকরণ করে।
এর আগে বাজারে থাকা ই-নোজ প্রযুক্তি শুধুমাত্র খাবারের গুণমান বা গ্যাসের মতো সাধারণ গন্ধ শনাক্তে ব্যবহৃত হতো। তবে, এই কৃত্রিম নাক জটিল গন্ধের পার্থক্য করতে এবং বিভিন্ন ধরনের গন্ধ বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। যেমন, একাধিক গন্ধের মধ্যে পার্থক্য করা, যেটি পূর্ববর্তী প্রযুক্তি সঠিকভাবে করতে পারত না।
এই কৃত্রিম নাকের প্রযুক্তি শুধু কার্যকরী নয়, বরং বহনযোগ্যও। ডিভাইসটি অত্যন্ত পাতলা এবং নমনীয়, যেটি সহজে কোথাও নিয়ে যাওয়া এবং ব্যবহার করা সম্ভব। এমনকি, এটি ৩০ হাজারবার ভাঁজ করেও এর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয় না। এটি ব্যবহারকারীকে সুবিধা দিচ্ছে যে, তাদের জীবনে এটি সহজেই যুক্ত হতে পারে এবং দিনের পর দিন ব্যবহৃত হতে পারে।
এই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ ব্যবহার অনেক বিস্তৃত। স্বাস্থ্য খাতে, কৃত্রিম নাকটি ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, বা নিউমোনিয়া-এর মতো রোগ শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে, যেগুলি শ্বাসের মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব। এছাড়া, পরিবেশ দূষণ শনাক্তকরণেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষ করে বিষাক্ত গ্যাস বা মিথেন গ্যাস সনাক্ত করতে। খাদ্য শিল্পেও এর ব্যবহার ব্যাপক হতে পারে। খাবারের মান যাচাই, পচনশীলতা এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই কৃত্রিম নাক গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এছাড়া, পারফিউম বা কসমেটিক্স শিল্পে নতুন ধরনের গন্ধ তৈরি বা পরীক্ষাতেও এটি সহায়ক হতে পারে।
এই কৃত্রিম নাকের প্রযুক্তি গত বছর ACS Nano জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং স্যামসাং হিউম্যান-টেক পেপার অ্যাওয়ার্ড-এ ব্রোঞ্জ পুরস্কার অর্জন করেছে। গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, এটি ৯৫% সফলতার সাথে সাধারণ গন্ধ শনাক্ত করতে সক্ষম। এতে স্পষ্ট যে, এটি শুধুমাত্র একটি বৈজ্ঞানিক কৌতূহল নয়, বরং এটি ভবিষ্যতে বাস্তব জীবনে একটি কার্যকর প্রযুক্তি হতে চলেছে।
বর্তমানে এই প্রযুক্তি উন্নতির পথে রয়েছে। গবেষকরা এর কার্যকারিতা আরও বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন, যাতে এটি আরও সঠিক এবং দ্রুততার সাথে গন্ধ শনাক্ত করতে পারে। যদি ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি পরিপূর্ণভাবে বাজারে আসে, তবে এটি আমাদের জীবনকে আরও সহজ, স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ করে তুলবে।
এমন এক সময়ে যখন প্রযুক্তি মানুষের জীবনে সহায়ক হয়ে উঠছে, কৃত্রিম নাকের মতো উদ্ভাবন আমাদের ভবিষ্যতের দিকে একটি নতুন দৃষ্টি এনে দিয়েছে। এটি শুধুমাত্র একটি উদ্ভাবন নয়, বরং এর মাধ্যমে আমরা একটি নতুন যুগের দিকে প্রবাহিত হচ্ছি, যেখানে প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য একে অপরের পরিপূরক হবে।