মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মির (AA) দমন-পীড়ন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সেনাবাহিনীর চেয়েও বেশি নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন বহু রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিনই দেখা মিলছে নতুন আশ্রয়প্রার্থীদের। তারা বলছেন, আরাকান আর্মি দখলে নেয়ার পর অনেক অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর নিধন আরও বেড়ে গেছে।
সরেজমিনে উখিয়ার বালুখালীর ৫ নম্বর ক্যাম্পে দেখা গেছে, রাখাইনের মংডু এলাকার বুড়া শিকদারপাড়াসহ আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা সেখানে নতুন করে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ এপ্রিলের শুরুতেই পরিবার নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। পালিয়ে আসাদের ভাষ্য অনুযায়ী, আরাকান আর্মি গ্রামের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়, গুলি চালায় এবং নির্যাতন করে তাদের এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে।
মোহাম্মদ আলী নামের এক ব্যক্তি জানান, আগুন লাগানোর পর সারারাত পালিয়ে ছিলেন। পরদিন আরাকান আর্মি তাদের খুঁজে বের করে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। তার স্ত্রী বলেন, আরাকান আর্মি তাদের জিম্মি করে রাখে এবং পরে সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।
অভিযোগ রয়েছে, রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণীদের ধরে এনে তাদের জিম্মি করে রাখা হচ্ছে। অনেককে দাস-দাসীর মতো ব্যবহার করা হচ্ছে, কেউ কেউ নির্মাণকাজে বাধ্য হচ্ছেন। একজন যুবক অভিযোগ করেন, আরাকান আর্মি তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে, এমনকি তার এক স্বজনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। অপর একজন জানান, কিশোর-তরুণদের তুলে নিয়ে চরম অত্যাচার চালানো হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রমতে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে নতুন করে অন্তত ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশ ঘটেছে গত বছরের মে ও জুন মাসে। যদিও ক্যাম্পের পরিধি বাড়েনি, ফলে অনেককে অন্যের ঘরে জায়গা নিতে হচ্ছে। রোহিঙ্গা নেতাদের মতে, প্রতিদিন প্রায় ৫০০ জন করে মানুষ সীমান্ত পার হচ্ছেন।
এক রোহিঙ্গা নেতা জানান, আরাকান আর্মি স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছে যে রাখাইনে ‘রোহিঙ্গা’ বলে কোনো জাতিগোষ্ঠী থাকবে না। কেউ রোহিঙ্গা পরিচয় দিলে তাকে নির্মূল করা হবে—এই বক্তব্য গণহত্যার স্পষ্ট লক্ষণ বলেও তিনি দাবি করেন।
এদিকে রাখাইনের নতুন কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের দিয়ে মাদক ও পণ্য চোরাচালান করাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। র্যাব-১৫ কক্সবাজার ও পার্বত্য অঞ্চলের লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্য চোরাচালান হয়ে মিয়ানমারে যাচ্ছে এবং মাদক সিন্ডিকেট আবার সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে।
২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, সীমান্ত এলাকায় অস্থিরতা বাড়লেও বিজিবি কঠোর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে।
রোহিঙ্গাদের চলমান ঢল থামার কোনো লক্ষণ নেই। প্রত্যাবাসন তো দূরের কথা, নতুন করে আসা এত বিপুল সংখ্যক মানুষের খাদ্য, আশ্রয় ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।