বাংলাদেশে জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক শৈথিল্যের সুযোগে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে ভেজাল ও নকল ওষুধের চক্র। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহর ও গ্রামীণ এলাকায় এসব ওষুধ ছড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ হারে, যা নিয়ে চিকিৎসক ও রোগীদের মধ্যে উদ্বেগ চরমে উঠেছে।
বিশেষ করে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের ক্ষেত্রে নকল ও ভেজালের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, অনেক চিকিৎসক সেই ওষুধের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন বা পুরোপুরি বন্ধ করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘অ্যালবুমিন ইনজেকশন’—যা বড় অস্ত্রোপচার বা গুরুতর দুর্ঘটনার পর রক্তে প্লাজমার ঘনত্ব বাড়াতে ব্যবহৃত হয়।
চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, বাজারে থাকা অ্যালবুমিন ইঞ্জেকশনের অনেক নমুনা পরীক্ষায় নকল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কয়েকটি হাসপাতালে এই ইনজেকশন প্রয়োগের পর রোগীর শরীরে জটিলতা দেখা দিলে সেগুলো পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যায়, ওষুধগুলো ছিল ভেজাল এবং দেখতে এতটাই আসলের মতো যে খালি চোখে তা বোঝা প্রায় অসম্ভব।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ জানান, “বাজারে নকল অ্যালবুমিন এতটাই ছড়িয়ে গেছে যে আমরা এখন এটি ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছি। সাধারণ মানুষ তো বুঝবেই না, আমরা ডাক্তাররাও অনেক সময় বুঝতে পারি না কোনটা আসল, কোনটা নকল।”
বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার-এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে আরও উদ্বেগজনক তথ্য। গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় বাজারজাত প্রায় ১০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধই নকল, ভেজাল বা নিম্নমানের। রাজধানীর বাইরের চিত্র আরও ভয়াবহ—কিছু এলাকায় আটা ও ময়দা দিয়ে তৈরি ট্যাবলেট বাজারে ছাড়ার তথ্যও ধরা পড়েছে।
এই ধরনের নকল ওষুধের ব্যবহার রোগীকে সুস্থ করার পরিবর্তে আরও জটিল অবস্থায় ফেলতে পারে। গবেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের পরিস্থিতি দেশের স্বাস্থ্যখাতের মান ও জনগণের নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার ২০২৩ সালে “ওষুধ ও কসমেটিক আইন” পাস করে, যেখানে নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বিক্রির জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেই আইনে কারও বিরুদ্ধে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর হয়নি, যা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।