নেত্রকোনার শতবর্ষের ঐতিহ্যের বাহক ‘বালিশ মিষ্টি’ এবার পেল দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি। সম্প্রতি পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বালিশ মিষ্টিকে দেশের ৫৮তম জিআই পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
বালিশ মিষ্টির উৎপত্তি নেত্রকোনা শহরের বারহাট্টা রোডে। প্রায় ১২০ বছর আগে স্থানীয় মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক গয়ানাথ ঘোষ প্রথম এই মিষ্টি তৈরি করেন। ছোট বালিশের মতো লম্বাটে ও নরম আকৃতির জন্য এর নাম হয় ‘বালিশ মিষ্টি’। সাধারণ সন্দেশ বা রসগোল্লার তুলনায় একেবারেই ভিন্ন স্বাদের এই মিষ্টি এখন নেত্রকোনার সামাজিক অনুষ্ঠান, উৎসব ও উপহারের অপরিহার্য অংশ। গয়ানাথ ঘোষের তৃতীয় প্রজন্ম এখনো এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
২০২৩ সালে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বালিশ মিষ্টির জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয়। পণ্যের ইতিহাস, উৎপাদন প্রক্রিয়া ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে বিস্তৃত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষে সম্প্রতি এর অনুমোদন মেলে।
গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডারের বর্তমান কর্ণধার ও গয়ানাথ ঘোষের নাতি বাবুল চন্দ্র মোদক বলেন, “বালিশ মিষ্টি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা অত্যন্ত গর্বিত। দাদার হাতে যার সূচনা হয়েছিল, তা আজ দেশের গৌরবের প্রতীকে পরিণত হলো।” তিনি জানান, ১৯৬৫ সাল থেকে তার বাবা নিখিল চন্দ্র মোদক এবং বর্তমানে তৃতীয় প্রজন্মের তিন ভাই মিলে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান জানান, “এর আগে বিজয়পুরের সাদামাটি জিআই সনদ পেয়েছিল। এবার বালিশ মিষ্টি যুক্ত হওয়ায় নেত্রকোনাবাসীর গর্ব আরও বেড়েছে। আমরা এটিকে জেলার ব্র্যান্ডিং হিসেবে তুলে ধরতে কাজ করব।”
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে নেত্রকোনার দুর্গাপুরের বিজয়পুরের সাদামাটি জিআই স্বীকৃতি পেয়েছিল। আর ২০২৫ সালে এসে বালিশ মিষ্টির এই অর্জন জেলার জন্য যোগ করল নতুন গৌরব। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টি আজ শুধু স্থানীয় স্বাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আন্তর্জাতিক স্বীকৃত এক ঐতিহ্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।