বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন যেন এক বহুমুখী প্রযুক্তি যন্ত্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি একে একে দখল করে নিয়েছে বহু একক ডিভাইসের জায়গা। একসময় আমাদের ব্যাগ বা ড্রয়ারে থাকা অনেক যন্ত্র এখন স্মার্টফোনেই মিলিয়ে গেছে। এমন অন্তত ১০টি ডিভাইস আছে, যা একসময় প্রতিদিন ব্যবহার করতাম, কিন্তু এখন সেসবের কথা খুব একটা মনে পড়ে না—কারণ স্মার্টফোন সেগুলোর কাজ মুহূর্তেই করে ফেলছে।
প্রথমেই ক্যামেরার কথা বলা যায়। একসময় ডিজিটাল ফটোগ্রাফিতে কম্প্যাক্ট ক্যামেরা ছিল সবার প্রথম পছন্দ। যদিও প্রথম দিকের ফোন ক্যামেরার মান তেমন ভালো ছিল না, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আলাদা মেমোরি, ব্যাটারি বা অতিরিক্ত সরঞ্জাম ছাড়াই ভালো মানের ছবি তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে স্মার্টফোন। এআই ও নানা ফিচারের কারণে তরুণ প্রজন্ম এখন আলাদা ক্যামেরা না নিয়ে স্মার্টফোন দিয়েই ছবি তোলে।
পকেট ক্যালকুলেটরও আজ অনেকটা ইতিহাস। একসময় TI-35-এর মতো সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ছাড়া হিসাব কষা ভাবা যেত না। কিন্তু এখন স্মার্টফোনের ক্যালকুলেটর অ্যাপ একইসাথে বৈজ্ঞানিক, গ্রাফিক্যাল এবং প্রতীকী গণিত সমাধানে সক্ষম। ফলে পরীক্ষার বাইরে ক্যালকুলেটরের ব্যবহার প্রায় বিলীন।
নেভিগেশনে গারমিন বা টমটমের মতো ডেডিকেটেড জিপিএস ডিভাইস একসময় ছিল অপরিহার্য। কিন্তু গুগল ম্যাপসহ স্মার্টফোন অ্যাপগুলো শুধু দিকনির্দেশই নয়, লাইভ ট্রাফিক আপডেট ও স্মার্ট রিরুটিং সুবিধা দিয়ে ডেডিকেটেড জিপিএসকে প্রায় অপ্রয়োজনীয় করে তুলেছে।
সংগীত শোনার ক্ষেত্রে এমপিথ্রি প্লেয়ার ছিল প্রজন্মের আবেগ। কিন্তু স্পটিফাই, অ্যাপল মিউজিক বা ইউটিউব মিউজিকের মতো স্ট্রিমিং অ্যাপ স্মার্টফোনে আসার পর এমপিথ্রি প্লেয়ারও ইতিহাসে ঠাঁই নিয়েছে।
অ্যালার্ম ঘড়ি, একসময় ভোরে ওঠার সেরা সঙ্গী, এখন স্মার্টফোনের অ্যালার্ম ফিচারের কাছে হার মেনেছে। একাধিক অ্যালার্ম, স্নুজ কাস্টমাইজেশন, নানা টোন—সবই এখন ফোনে সহজলভ্য।
টর্চলাইটও ধীরে ধীরে হারিয়েছে জনপ্রিয়তা। স্মার্টফোনের এলইডি ফ্ল্যাশ এখন দৈনন্দিন আলোর প্রয়োজন মেটায়। যদিও পাহাড় বা বনে ভ্রমণের সময় এখনো আলাদা টর্চলাইট জরুরি হয়ে পড়ে।
ভয়েস রেকর্ডার, যা একসময় ছাত্র, সাংবাদিক বা সঙ্গীতশিল্পীর অপরিহার্য যন্ত্র ছিল, সেটিও এখন স্মার্টফোনের রেকর্ডিং অ্যাপ দ্বারা প্রতিস্থাপিত। এসব অ্যাপ এখন সহজেই রেকর্ড এডিট ও টেক্সটে রূপান্তর করতে পারে।
ডকুমেন্ট স্ক্যান করার জন্য আগে বড়সড় স্ক্যানার ব্যবহার করতে হতো। এখন অ্যাডোব স্ক্যান বা মাইক্রোসফট লেন্সের মতো অ্যাপ দিয়ে ফোনেই মুহূর্তে স্ক্যান, অটো-ক্রপ এবং PDF তৈরির সুযোগ পাওয়া যায়।
পাম পাইলটের মতো পার্সোনাল ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিভাইসগুলো একসময় ক্যালেন্ডার, নোট ও কন্টাক্ট ম্যানেজ করত। এখন সিরি বা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো ফিচার স্মার্টফোনে আরও উন্নতভাবে সেই কাজ করছে।
শেষে আসে ই-রিডার। যদিও Kindle-এর মতো ডিভাইস এখনও টিকে আছে, তবে সাধারণ পাঠকের জন্য স্মার্টফোনই মৌলিক ই-রিডার হয়ে উঠছে। বই, ম্যাগাজিন, সংবাদ—সবই এখন ফোনে পাওয়া যাচ্ছে, যদিও দীর্ঘপাঠের জন্য ই-রিডারের ই-ইঙ্ক স্ক্রিন এখনও অপরিহার্য।
সব মিলিয়ে, স্মার্টফোন শুধু বিভিন্ন ডিভাইস প্রতিস্থাপন করেনি, বরং প্রযুক্তির সঙ্গে আমাদের সম্পর্কই বদলে দিয়েছে। আগে আলাদা আলাদা যন্ত্রের ব্যাগ প্রয়োজন হতো, এখন একটি অল-ইন-ওয়ান ডিভাইস পকেটেই পাওয়া যায়। যদিও এই পরিবর্তন মাঝে মাঝে পুরনো দিনের জন্য খানিক নস্টালজিয়াও জাগিয়ে তোলে।