বার্ধক্য শব্দটি শুনলেই অনেকের মনে এক ধরনের ভয় কাজ করে। যদিও এটি জীবনের এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তারপরও বেশিরভাগ মানুষই চান যতটা সম্ভব বেশি দিন তারুণ্য ধরে রাখতে। কিন্তু আমাদের প্রতিদিনের কিছু অভ্যাস, বিশেষ করে খাবার ও পানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে অসতর্কতা, ত্বকে অকাল বার্ধক্যের ছাপ ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন কিছু পানীয় রয়েছে যেগুলো নিয়মিত পান করলে চেহারায় দ্রুত বয়সের ছাপ ফুটে উঠতে পারে। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে এনার্জি ড্রিংকস। অনেকেই ক্লান্তি দূর করতে বা ওয়ার্কআউটের সময় এগুলো পান করেন। তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি দিলেও এতে থাকা উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন ও চিনি ত্বককে ডিহাইড্রেট করে, রুক্ষ ও নিস্তেজ করে তোলে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ায়, যার ফলে ত্বকে দ্রুত বয়সের ছাপ পড়ে। বিকল্প হিসেবে বেছে নেওয়া যেতে পারে ডিক্যাফ কফি কিংবা চিনিমুক্ত হারবাল চা—যেমন পুদিনা, দারুচিনি বা তুলসী চা, যা শুধু ত্বকই নয়, সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
দ্বিতীয় ক্ষতিকর পানীয় হলো অ্যালকোহল। এটি শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে এবং প্রদাহজনক কোষের সংখ্যা বাড়ায়, ফলে ত্বকে শুষ্কতা, রুক্ষতা ও জৌলুশহীনতা দেখা দেয়। গবেষণায় জানা গেছে, দীর্ঘমেয়াদে অ্যালকোহল সেবনের ফলে জৈবিক বার্ধক্য দ্রুত ঘটে। এর স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে প্রাকৃতিক ফলের রস, যা শরীরকে সতেজ রাখে ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
তৃতীয়টি হলো আমাদের অতি পরিচিত কোমল পানীয়। এতে থাকা অতিরিক্ত চিনি ত্বকের জন্য অতি ক্ষতিকর। চিনি কোলাজেন ও ইলাস্টিন ধ্বংস করে, যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে ত্বক ঝুলে পড়ে ও বলিরেখা স্পষ্ট হয়। এর বিকল্প হতে পারে লেবু-মধু পানি, যা শুধু ত্বক নয়, হজম ব্যবস্থাও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে লেবু ও মধু মেশানো হালকা গরম পানি পানে টক্সিন দূর হয়, পেট ফাঁপা কমে এবং শরীরও থাকে চাঙ্গা।
ত্বক ও চেহারায় বয়সের ছাপ ঠেকাতে খাদ্য তালিকায় কিছু পুষ্টিকর উপাদান রাখা অত্যন্ত জরুরি। যেমন—
সবুজ শাক-সবজি: শরীরকে বিষমুক্ত রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক-চুলকে সুন্দর রাখে।
আখরোট: এতে থাকা ওমেগা-থ্রি ও পলিফেনল হার্ট সুস্থ রাখে ও ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
আমন্ড: এতে থাকা নানা পুষ্টি উপাদান বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে।
গ্রিন টি: কোলেস্টেরল কমায়, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
কিউই: এতে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম রয়েছে, যা ইমিউন সিস্টেম ও হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো।
জিরা: হজম শক্তি বাড়ায়, গ্যাস-অ্যাসিডিটি কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
সুস্থ ও সতেজ থাকতে হলে শুধুমাত্র চেহারার যত্নই নয়, খাদ্য ও পানীয় নির্বাচনে সচেতনতা জরুরি। কারণ, আপনার প্রতিদিনের ছোট ছোট সিদ্ধান্তই বড় প্রভাব ফেলতে পারে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ও তারুণ্যের উপর।