বর্ষা এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি, কিন্তু তার আগেই আবহাওয়ার পরিবর্তনে বেড়ে গেছে ডায়রিয়া, ভাইরাল জ্বর, সর্দি-কাশি ও অন্যান্য সংক্রামক রোগের প্রকোপ। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রতিদিনই এ ধরনের রোগীদের ভিড় বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, শুধু ওষুধ নয়, এই সময়ে প্রয়োজন সচেতনতা ও সাবধানতা। বিশেষ করে কোন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা উচিত, তা জানা অত্যন্ত জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষাকাল বা তার আগমনের সময় আমাদের কিছু অভ্যাস শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। সংক্রমণ এড়াতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে যেসব কাজ না করাই ভালো:
১. খোলা পানীয় ও রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলুন:
এই সময়টায় খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ফুটপাতের শরবত, ফুচকা বা অন্যান্য খাবারে জীবাণু থাকার ঝুঁকি থাকে, যা থেকে সহজেই ডায়রিয়া, টাইফয়েড কিংবা হেপাটাইটিস হতে পারে। তাই বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার না খাওয়াই ভালো।
২. ভেজা কাপড়ে দীর্ঘক্ষণ না থাকুন:
বৃষ্টিতে ভিজে এসে যদি কেউ ভেজা কাপড়েই থেকে যায়, তবে ঠান্ডা লেগে সর্দি, কাশি ও জ্বর দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা এতে বেশি সংবেদনশীল। তাই ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে শুকনো কাপড়ে পরিবর্তন করা জরুরি।
৩. ভুল চিকিৎসা নয়:
নিজে থেকে ওষুধ খাওয়া—যেমন নাপা বা অ্যান্টিবায়োটিক সেবন—শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ না খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
৪. অপরিষ্কার পরিবেশে না থাকুন:
বর্ষায় জমে থাকা পানি মশার প্রজননের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে, যা ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ ছড়ায়। তাই বাসা ও আশপাশ পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরি।
৫. পানি কম খাওয়া বন্ধ করুন:
বর্ষাকালে তৃষ্ণা কম লাগলেও, শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। এতে শরীরে পানিশূন্যতা রোধ করা সম্ভব।
এছাড়া ডায়রিয়া কীভাবে ছড়ায়, তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি পানিবাহিত রোগ হলেও, পচা-বাসি খাবারের মাধ্যমেও জীবাণু ছড়ায়। এসব জীবাণু দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে, বিশেষত যদি খাবার ঠান্ডা হয়। তবে গরম খাবারে থাকলেও তারা সহজে সক্রিয় হতে পারে না। এছাড়া অপরিষ্কার পানিতে তৈরি খাবারও ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ।
ডায়রিয়ার লক্ষণসমূহ:
১. একাধিকবার বমিসহ পানির মতো পাতলা পায়খানা হওয়া
২. মলের সঙ্গে রক্ত থাকতে পারে
৩. কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা
৪. প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
৫. হজমে সমস্যা, পেটব্যথা ও অস্বস্তি
৬. খাবারে অনীহা ও বমি বমি ভাব
এই সময়ে সাবধানতা অবলম্বনই হতে পারে বড় অসুস্থতা থেকে বাঁচার মূল চাবিকাঠি।