ক্যান্সার, একটি এমন শব্দ যা এখনও বহু মানুষের মনে ভয় জাগায়। কারণ অধিকাংশ সময় যখন ক্যান্সার ধরা পড়ে, তখন সেটা অনেকটাই ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন এমন এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যা সেই চিত্র পাল্টে দিতে পারে।
সম্প্রতি উদ্ভাবিত ‘শিল্ড’ নামের এক নতুন রক্ত পরীক্ষা পদ্ধতি এখন প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যান্সার শনাক্তে আশাজাগানিয়া সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী কিংবা স্তন ক্যান্সারের মতো নীরব ঘাতকদের প্রাথমিক স্তরেই চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে এই পরীক্ষার মাধ্যমে—এবং সবকিছু হচ্ছে মাত্র এক ফোঁটা রক্ত থেকে।
এই পদ্ধতির কার্যকারিতা প্রমাণের সবচেয়ে জীবন্ত উদাহরণ ৭৭ বছর বয়সী জন গর্মলি। প্রায় চার বছর আগে, গর্মলি রুটিন রক্ত পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যান। কিছুটা নিয়মরক্ষার মতোই। কিন্তু ফলাফল ছিল চমকপ্রদ। পরীক্ষায় ধরা পড়ে, তার কোলনে সম্ভাব্য ক্যান্সারের ইঙ্গিত। পরবর্তীতে কোলনোস্কোপি করে নিশ্চিত হওয়া যায়—তিনি স্টেজ ২ কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত। তবে সৌভাগ্যবশত, ক্যান্সার তখনও লিম্ফ নোডে ছড়িয়ে পড়েনি।
এই সময়েই গর্মলি হয়ে ওঠেন ‘শিল্ড’ পরীক্ষার প্রথমদিকের রোগীদের একজন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার টিউমার অপসারণ করা হয়, এবং মাত্র ১০ দিনের মধ্যেই তিনি কাজে ফিরে যান। এটা একধরনের অসম্ভবকে সম্ভব করার মতো ঘটনা।
প্রচলিত পদ্ধতিতে ক্যান্সার শনাক্তে সাধারণত ‘বায়োপসি’ করা হয়। এটি সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং রোগীদের জন্য শারীরিক-মানসিক চাপেরও বিষয়। অন্যদিকে, বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘শিল্ড’ পদ্ধতি একপ্রকার “তরল বায়োপসির সমুদ্রে রক্তের এক ফোঁটা”। অর্থাৎ অত্যন্ত সহজ, অল্প সময়েই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা।
তবে এই প্রযুক্তি এখনও কিছু সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ। শিল্ড প্রাথমিক স্তরের ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারলেও, এটি এখনও প্রচলিত ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড’ কোলনোস্কোপির মতো নির্ভুল নয়। ফলে, চিকিৎসা বিশারদদের ধারণা—এই প্রযুক্তি প্রচলিত পদ্ধতির বিকল্প নয়, বরং একটি পরিপূরক মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।
যদি সব কিছু পরিকল্পনা মতো চলে, তাহলে ভবিষ্যতে সাধারণ রক্ত পরীক্ষার সঙ্গেই যোগ হবে ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের এই ‘শিল্ড’। এবং তাতে হয়তো বহু মানুষের জীবন রক্ষা পাবে, যাদের ক্যান্সার অনেক আগেই ধরা পড়বে—চিকিৎসা শুরু হবে দ্রুত, আর জীবন ফিরে পাবে গতি।