যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা টিম ফ্রিড একসময় ছিলেন ট্রাক মেরামতের কর্মী। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তিনি হয়ে ওঠেন সাপের বিষ নিয়ে গবেষণায় নিবেদিত এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তি। সাপ ধরার সময় নিজেকে রক্ষা করতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চেয়ে শুরু হয় তার যাত্রা—যার অংশ হিসেবে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ২০০ বারেরও বেশি সাপের কামড় সহ্য করেছেন এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে ৭০০ বারেরও বেশি নিয়েছেন গোখরাসহ পৃথিবীর ভয়ঙ্কর সব সাপের বিষ।
টিম ফ্রিডের সংগ্রহে রয়েছে মাম্বা, কোবরা, তাইপান ও ক্রেইট প্রজাতির সাপের বিষ। তার রক্ত পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা এমন অ্যান্টিবডি খুঁজে পেয়েছেন, যা মারাত্মক সাপের বিষ প্রতিরোধে সক্ষম। প্রাণীদের ওপর এই অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করে দেখা গেছে, তা সাপের বিষের মারাত্মক প্রভাব থেকে তাদের রক্ষা করতে পারে।
বর্তমানে প্রচলিত অ্যান্টিভেনম সাধারণত একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির সাপের বিষের জন্যই কার্যকর। আবার একই প্রজাতির সাপ অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন বিষ ধারণ করে, যার ফলে একটি দেশের তৈরি অ্যান্টিভেনম অন্য দেশের একই সাপের বিরুদ্ধে কম কার্যকর হতে পারে। এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যেই বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে একটি সার্বজনীন অ্যান্টিভেনম তৈরির চেষ্টা করে আসছেন।
এই সময়েই বায়োটেক কোম্পানি Centivax–এর সিইও ড. জ্যাকব গ্লানভিল টিম ফ্রিডের খোঁজ পান এবং তার রক্তের নমুনা নিয়ে গবেষণার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, “বিষয়টা অদ্ভুত হলেও, আমি প্রথম ফোনেই বলেছিলাম—তোমার কিছু রক্ত পেলে খুব উপকার হতো।”
গবেষণায় দেখা গেছে, টিমের শরীরে ‘broadly neutralizing antibodies’ তৈরি হয়েছে, যা নিউরোটক্সিনভিত্তিক বিষের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। গবেষকরা ‘সেল’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানান, তারা দুটি শক্তিশালী অ্যান্টিবডি শনাক্ত করেছেন, যা ইলাপিডস গোত্রের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর। এরপর তৃতীয় একটি উপাদান যুক্ত করে তৈরি করা হয় একটি অ্যান্টিভেনম ককটেল, যা ১৯টি মারাত্মক বিষধর সাপের মধ্যে ১৩টির বিরুদ্ধে পূর্ণ এবং ৬টির বিরুদ্ধে আংশিক সুরক্ষা দিয়েছে ইঁদুরের দেহে।
ভবিষ্যতে এই ককটেল আরও উন্নত করে ভাইপার গোত্রসহ অন্যান্য সাপের বিরুদ্ধেও কার্যকর করার চেষ্টা চলছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ১০–১৫ বছরের মধ্যে সব ধরনের বিষের জন্য কার্যকর অ্যান্টিভেনম তৈরি করা সম্ভব হবে।
লিভারপুল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক নিক কেসওয়েল বলেন, “এটি একটি নতুন পথ যা সাপের কামড় থেকে সুরক্ষার বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তবে এখনো অনেক কাজ বাকি।”
সবচেয়ে বড় কথা, টিম ফ্রিড নিজেকে শুধু একজন বিষ প্রতিরোধী ব্যক্তি হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেননি, বরং নিজের শরীরকে বিশ্বমানবতার সেবায় উৎসর্গ করেছেন। তিনি বলেন, “আমি মানবতার জন্য ভালো কিছু করছি—এটা আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গর্বের।”