দেশের স্বাস্থ্যখাতে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রোবোটিক পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু হতে যাচ্ছে। রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক বিএসএমএমইউ)-এর সুপার স্পেশালটি হাসপাতালে এই আধুনিক কেন্দ্রটি স্থাপন করা হচ্ছে।
চীন সরকারের সহযোগিতায় এই প্রকল্পে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও উন্নত মানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রায় ৪,০০০ বর্গফুট জায়গাজুড়ে নির্মিত এই কেন্দ্রটি আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হওয়ার কথা রয়েছে, যদিও প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল গত বছরের ৫ আগস্ট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক মেডিসিন ও পুনর্বাসন বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. এম. এ. শাকুর জানান, “এই প্রকল্পের আওতায় চীনের দুটি বিশেষজ্ঞ দল এক বছরের জন্য বাংলাদেশে আসবে এবং আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করবে।” তিনি আরও বলেন, “২০ কোটি টাকার উন্নত রোবোটিক পুনর্বাসন যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যেই এসে গেছে, আরও কিছু আসার পথে রয়েছে। প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রকল্প পরিচালক এবং আমাদের বিভাগ যৌথভাবে পরিচালনা করছেন।”
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যৌথ অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, যেখানে চীনের পক্ষ থেকে মূলত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক ও কেন্দ্রের সদস্য সচিব ডা. মো. আবু নাসের জানান, “কেন্দ্রটির প্রশাসনিক, আর্থিক এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি পৃথক ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। চিকিৎসা ও ক্লিনিকাল কার্যক্রম তদারকি করবে শারীরিক মেডিসিন বিভাগ।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক অগ্রগতি। এটি শুধু দেশের প্রথম রোবোটিক পুনর্বাসন কেন্দ্র নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে।”
বর্তমানে অনেক বাংলাদেশি উন্নত রোবোটিক থেরাপির জন্য সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের মতো দেশে যান। ডা. শাকুর বলেন, “এই কেন্দ্র চালু হলে দেশেই বিশ্বমানের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।”
এই রোবোটিক পুনর্বাসন কেন্দ্র স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের এক যুগান্তকারী অগ্রগতি। এখন বিশ্বমানের পুনর্বাসন চিকিৎসা মিলবে দেশেই, ঢাকাতেই। এশিয়ার পুনর্বাসন চিকিৎসায় এক নতুন মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। দেশের মানুষের জন্য বিশ্বমানের থেরাপি এখন আর বিদেশে গিয়ে নিতে হবে না, এই কেন্দ্রের মাধ্যমে সেই স্বপ্ন বাস্তব হয়ে উঠছে।