উজ্জ্বল রঙের পালক, অভিনব নৃত্য ও চমকপ্রদ প্রেম নিবেদনের জন্য বিখ্যাত ‘বার্ডস-অফ-প্যারাডাইস’ পাখিরা নতুন এক বৈশিষ্ট্যে গবেষকদের বিস্মিত করেছে—এরা জ্বলে ওঠে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, এই পাখিরা বায়োফ্লোরেসেন্স নামক একটি বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে আলো নির্গত করতে পারে।
বায়োফ্লোরেসেন্স হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো প্রাণী অতিবেগুনি বা নীল আলো শোষণ করে তা হালকা নীল, সবুজ বা হলুদ রঙে নির্গত করে। এটি মূলত চোখে দেখা যায় না, কিন্তু বিশেষ আলোর নিচে এই আলো দৃশ্যমান হয়।
গবেষক দলটি অন্ধকার ঘরে সংরক্ষিত বার্ডস-অফ-প্যারাডাইস পাখির উপর নীল আলো ফেলে তাদের নির্গত আলোর বিশ্লেষণ করে। দেখা গেছে, ৪৫টি প্রজাতির মধ্যে ৩৭টি প্রজাতিতে এই আলো নির্গত হওয়ার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর মধ্যে ২১টি প্রজাতির পুরুষ পাখির শরীরের বাইরের অংশে বায়োফ্লোরেসেন্স দেখা যায় এবং ১৬টি প্রজাতির মুখ ও গলায় এই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
গবেষকদের মতে, পুরুষ বার্ডস-অফ-প্যারাডাইস পাখিরা তাদের প্রেম নিবেদনের সময় এই আলো ব্যবহার করে। উজ্জ্বল রঙের পালক, নির্দিষ্ট নাচের ধরণ ও ঝলমলে আলোর সংমিশ্রণে তারা স্ত্রী পাখিদের আকৃষ্ট করে। এটি প্রজননের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হয়ে উঠেছে।
তবে সব বার্ডস-অফ-প্যারাডাইস পাখির মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য দেখা যায় না। Lycocorax, Manucodia এবং Phonygammus গণের আটটি প্রজাতির পাখির মধ্যে এই ক্ষমতা অনুপস্থিত। গবেষকদের ধারণা, এই প্রজাতিগুলি একগামী (monogamous), অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সঙ্গীর সঙ্গে জীবন কাটায় এবং অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় না। তাই বায়োফ্লোরেসেন্স তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল না এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি হারিয়ে গেছে।
ড. রেনে মার্টিন, যিনি এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন, বলেছেন, “আমি বিশ্বাস করি বায়োফ্লোরেসেন্স সম্ভবত পাখিদের মধ্যে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। যদিও মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা এখনো নতুন, তবে আমরা ক্রমেই এর বিস্তৃতি দেখতে পাচ্ছি।”
এই গবেষণা বার্ডস-অফ-প্যারাডাইস পাখিদের বায়োফ্লোরেসেন্সের রহস্য উন্মোচন করেছে, যা প্রাকৃতিক বিশ্বের একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। ভবিষ্যতের গবেষণায় আরও অনেক পাখি এবং প্রাণীর মধ্যে এই বিশেষ ক্ষমতার উপস্থিতি শনাক্ত হতে পারে। এটি প্রকৃতির অদেখা দিকগুলোর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে।