পটুয়াখালীর আলিপুর মৎস্যবন্দরে জেলের জালে ধরা পড়েছে ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ বা ‘কালো পোয়া’ নামে বিরল এক সামুদ্রিক মাছ। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে মাছটি আলীপুর বন্দরের মেসার্স জাবের ফিসে আনা হলে খোলা বাজারে উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। মাছটির ওজন ৪ কেজি ৯০০ গ্রাম এবং প্রতি কেজি প্রায় ১৬ হাজার টাকা দরে ক্রয় করা হয়।
আড়তে মাছটি উঠতেই স্থানীয় মানুষজন ভিড় জমায়। ডাকের মাধ্যমে মাছটি কিনে নেন ‘ফ্রেশ ফিস কুয়াকাটা’র স্বত্বাধিকারী পিএম মুসা। তিনি জানান, মাছটি রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হবে। এর আগে গত বুধবার তিনি আরও একটি কালো পোয়া মাছ (ওজন সাড়ে ৪ কেজি) ৭২ হাজার টাকায় কিনেছিলেন। স্থানীয় জেলেদের কাছে মাছটি ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ ও দাঁতিনা নামেও পরিচিত। আন্তর্জাতিক বাজারে এ মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে এর বায়ুথলি (এয়ার ব্লাডার) চীনা ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ও প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, ফলে এর দাম অত্যন্ত বেশি।
ওয়ার্ল্ড ফিস বাংলাদেশের গবেষণা সহকারী মো. বখতিয়ার উদ্দিন জানান, কালো পোয়া (Protonibea diacanthus) হলো Sciaenidae পরিবারের একটি বিরল সামুদ্রিক মাছ। সাধারণত এদের দৈর্ঘ্য ৫০ থেকে ১৮০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে এবং ওজন ১০ থেকে ২৫ কেজির মধ্যে হয়। তবে কোনো কোনো সময় এরা ৫০ কেজিরও বেশি হতে পারে। এ মাছ বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার, মহেশখালী, সেন্টমার্টিন, পটুয়াখালী ও বরিশাল উপকূলে মাঝেমধ্যে দেখা যায়। কাদামাটি বা বালুময় তলদেশে এরা বসবাস করে এবং ছোট মাছ, চিংড়ি ও অন্যান্য ক্রাস্টেশিয়ান খেয়ে জীবনধারণ করে।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জানান, এ মাছকে ব্ল্যাক স্পটেড ক্রোকারও বলা হয়। সম্প্রতি দুইটি মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়েছে, যা অত্যন্ত আনন্দের খবর। এর এয়ার ব্লাডার আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক দামি হওয়ায় মাছটির মূল্যও বেশি। বাংলাদেশে সচরাচর এই মাছ ধরা পড়ে না, তবে সুন্দরবন এলাকায় কিছুটা পাওয়া যায়। সর্বোচ্চ ২৫ কেজি পর্যন্ত ওজনের কালো পোয়া মাছও আহরিত হয়েছে। সাম্প্রতিক ৫৮ দিনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সুফলেই জেলেরা এখন বেশি মাছ পাচ্ছেন এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।