শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রথমবারের মতো আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হলো রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে তারা পাঞ্জাব কিংসকে ৬ রানে হারিয়ে গড়েছে নতুন ইতিহাস। এই ঐতিহাসিক জয়ের মূল নায়ক ছিলেন একজনই— বিরাট কোহলি।
শেষ বলটি হওয়ার পরই কোহলি হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন মাঠে। চোখে জল, মুখে প্রশান্তির হাসি— যেন ১৮ বছরের এক দীর্ঘ লড়াইয়ের শেষ জয়ের আনন্দ। আইপিএলে নিজের পুরো ক্যারিয়ার আরসিবির হয়েই কাটিয়েছেন কোহলি, অবশেষে সেই দলটির হয়েই উঠল তার কাঙ্ক্ষিত ট্রফি। এই শিরোপা যেন তার অবিচল লয়্যালটি ও ভালোবাসার এক নিখাদ পুরস্কার।
ম্যাচশেষে কোহলি বলেন, “এই জয়টা সমর্থকদের জন্য, দলের জন্য। ১৮ বছর অনেক লম্বা সময়। আমি এই দলের জন্য আমার যৌবন, প্রাইম টাইম, অভিজ্ঞতা—সবই দিয়েছি। প্রতি মৌসুমেই চেষ্টার কোনো ঘাটতি ছিল না। এবার যে পেলাম, তা অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি। কখনো ভাবিনি এই দিনটা সত্যি হবে।”
কোহলি বিশেষভাবে স্মরণ করেন এবি ডি ভিলিয়ার্সকে। বলেন, “এই শিরোপা যেমন দলের, তেমনি এবিডিরও। সে যা করেছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য, তা অতুলনীয়। আমি ওকে বলেছি—এই ট্রফিটা তোমারও। ও অবসরে গিয়েও এখনো সবচেয়ে বেশি ‘প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ’ পুরস্কার জেতা খেলোয়াড়। সেটা বলেই বোঝা যায় ওর প্রভাব কতটা গভীর ছিল আমাদের দলে এবং আমার ক্যারিয়ারেও।”
আরসিবির প্রতি নিজের দায়বদ্ধতার কথাও অকপটে তুলে ধরেন কোহলি। বলেন, “আমি এই দলের হয়েই আইপিএল খেলে যাব। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে সরে দাঁড়াই, কিন্তু সিদ্ধান্ত বদলাইনি। আমি পাশে ছিলাম, ওরাও আমাকে সমর্থন করেছে। অন্য কোনো দলে খেললে এই শিরোপা এতটা স্পেশাল লাগত না, কারণ আমার হৃদয় আর আত্মা—দু’টোই বেঙ্গালুরুর সঙ্গে যুক্ত।”
ট্রফির গুরুত্ব তুলে ধরে কোহলি বলেন, “এটা নিঃসন্দেহে ক্যারিয়ারের অন্যতম বড় মুহূর্ত। আইপিএল এখন বিশ্বের অন্যতম মর্যাদার টুর্নামেন্ট। আমি বড় মুহূর্তে জিততে ভালোবাসি, আর এই ট্রফিটা আমার জীবনে অনেক দিন ধরে মিসিং ছিল। আজ রাতে আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারব—একদম শিশুর মতো।”
নিজের খেলার অনুপ্রেরণা নিয়ে বলেন, “আমি জানি, আর বেশি দিন খেলব না। তবে শেষ দিন যেন বলতে পারি—আমি সব দিয়েছি। শুধু ব্যাট নয়, ফিল্ডিংয়েও যেন পুরো ২০ ওভার মাঠে থাকি, দলকে সাহায্য করি—এটাই চাই। আমি শুধু ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হতে চাই না, পুরো খেলায় প্রভাব রাখতে চাই।”
ম্যাচের সারসংক্ষেপ:
ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে আরসিবি তোলে ১৯০ রান। পাতিদার, কোহলি ও অন্যান্য ব্যাটাররা ছোট ছোট অবদান রাখেন। জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাঞ্জাব কিংস থেমে যায় ১৮৪ রানে। ক্রুনাল পান্ডিয়ার ম্যাচজয়ী স্পেল এবং যশ দয়াল, হ্যাজেলউড, ও ভুবনেশ্বর কুমার-এর বোলিংয়ে শেষ হয়ে যায় পাঞ্জাবের স্বপ্ন।
তবে স্কোরকার্ডের চেয়ে অনেক বড় হয়ে থাকবে একটি মুহূর্ত—মাঠে কান্নায় ভেঙে পড়া কোহলি। এ যেন শুধুই একটি ম্যাচ নয়, এক অধ্যায়ের সমাপ্তি এবং নতুন এক স্বপ্নযাত্রার সূচনা।