বাবাকে গৃহবন্দি করা, ভাইদের আটক, সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার অভিযোগ কিংবা ইয়েমেনে ভয়াবহ হামলা—এই সব কারণে বিশ্বজুড়ে আলোচিত-সমালোচিত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। ক্ষমতায় ওঠার আগেই তার বিরুদ্ধে রিভলবার ঠেকিয়ে জমি দখলের অভিযোগও উঠেছিল। অথচ মাত্র নয় বছর আগে সৌদি আরবের রাজনীতিতে তার নাম তেমন কেউ শোনেনি।
বাদশাহ আবদুল্লাহ ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সময় থেকেই সিংহাসনের লড়াই শুরু হয়। তার মৃত্যুর পর বাদশাহ হন সালমান বিন আবদুল আজিজ। প্রথমে তিনি সৎভাই মুকরিনকে যুবরাজ করেন। কিন্তু মাত্র তিন মাসের মধ্যে মুকরিনকে সরিয়ে দেওয়া হয়, আর নতুন যুবরাজ হন মোহাম্মদ বিন নায়েফ। এদিকে এমবিএস পান ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী হতেই রাজপ্রাসাদে অদৃশ্য খেলা শুরু করেন এমবিএস। তিনি বাবাকে ধীরে ধীরে পরিবার ও ঘনিষ্ঠজন থেকে বিচ্ছিন্ন করেন। এমনকি নিজের মা ও দুই বোনকেও গৃহবন্দি করে রাখেন, যা বাদশাহ টেরই পাননি। বাবার নিরাপত্তা ও নজরদারিতে নিজের প্রভাব বাড়িয়ে দেন তিনি।
২০১৫ সালের ২৬ মার্চ তার নেতৃত্বেই ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বিমান হামলা চালানো হয়। প্রথমে প্রশংসিত হলেও পরে এটি আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার মুখে পড়ে। এরপরই শুরু হয় ক্ষমতা দখলের সবচেয়ে নাটকীয় অধ্যায়। রমজান মাসে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফকে বাদশাহর কক্ষে ডেকে তার অস্ত্র ও ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নায়েফকে সেদিন ওষুধও দেওয়া হয়নি। চাপের মুখে পরদিন তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন। সৌদি টিভিতে বারবার প্রচারিত হয় তার আনুগত্য প্রকাশের দৃশ্য। এর পরেই যুবরাজ ঘোষণা করা হয় মোহাম্মদ বিন সালমানকে।
যুবরাজ হওয়ার পর বিনিয়োগ, অর্থনীতি ও রাজনীতির সবকিছুই নিজের হাতে নেন তিনি। বিলাসবহুল ইয়ট, দ্য ভিঞ্চির বিখ্যাত চিত্রকর্ম কেনা কিংবা রিটজ-কার্লটনে প্রিন্সদের গৃহবন্দি করা—এসবই তার ক্ষমতার প্রতীক হয়ে ওঠে। ২০১৮ সালে নারীদের ড্রাইভিংয়ের অনুমতি দেন এবং আবায়ার বাধ্যবাধকতা শিথিল করেন। তবে সমালোচকদের মতে, এটি নারীর স্বাধীনতার জন্য নয়, অর্থনৈতিক প্রয়োজনে নেওয়া পদক্ষেপ।
জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডে তার ভূমিকা আন্তর্জাতিক মহলে প্রবল বিতর্ক তৈরি করে। সিআইএ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, খুনের নির্দেশ দিয়েছিলেন যুবরাজ নিজেই। ক্ষমতা দখলের পর তিনি রাজপরিবারের মাসিক ভাতা কমিয়ে দেন এবং ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তা মিলিয়ে প্রায় ৩৮০ জনকে গ্রেপ্তার করান।
আজ মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবের ক্ষমতার একক প্রতীক। কেউ তাকে দূরদর্শী সংস্কারক বলছেন, আবার কারও মতে তিনি আধুনিক স্বৈরশাসক।
তথ্যসুত্রঃ কালবেলা