প্রবাসে গিয়েও নিরাপদ নন বহু বাংলাদেশি শ্রমিক। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় হাজারো শ্রমিক প্রতিবছর পরিবার ও জন্মভূমি ছেড়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। স্বপ্ন থাকে ভালো আয় করে পরিবারকে একটু স্বচ্ছলতা এনে দেওয়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন অনেক সময় রূপ নেয় মর্মান্তিক ট্র্যাজেডিতে।
সম্প্রতি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) ও ফেয়ার স্কয়ার-এর এক যৌথ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সৌদি নিয়োগকর্তাদের গাফিলতি ও নিষ্ঠুর আচরণের কারণেই প্রতিবছর অনেক বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু ঘটছে। শুধু বাংলাদেশি নয়, ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদেরও একই পরিণতি হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধিকাংশ মৃত্যুর কারণ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা নির্মাণকাজে উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া। এসব দুর্ঘটনা যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকলে এড়ানো সম্ভব হতো। কিন্তু নিয়োগকর্তাদের অবহেলার কারণেই ঘটছে এমন মৃত্যু।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, অনেক সময় শ্রমিকদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ গোপন রাখা হয়। তদন্ত ছাড়াই “স্বাভাবিক মৃত্যু” বলে চালিয়ে দেওয়া হয়, ফলে পরিবারগুলো ন্যায্য ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হয়। এমনকি যারা কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের অনেকের মৃত্যুকেও “অকাজজনিত” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সৌদি আরব ২০৩৪ ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতি হিসেবে বিশাল নির্মাণ প্রকল্প শুরু করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে, এসব প্রকল্পে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে প্রবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর হার আরও বাড়বে।
সৌদি ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নের চাপে শ্রমিকদের অধিকার খর্ব হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এখনো পর্যন্ত নিরাপদ কর্মপরিবেশ, ন্যায্য মজুরি ও সামাজিক সুরক্ষার নিশ্চয়তায় কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের পরিচালক মিনকি ওর্ডেন বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সৌদি আরব ও ফিফার একটি নৈতিক দায়িত্ব। কাতার বিশ্বকাপের সময় যখন শ্রমিক সুরক্ষা নিয়ে সমালোচনা হয়, তখন কাতার সরকার পদক্ষেপ নিয়েছিল—যেমন: সুপ্রিম কমিটি গঠন, জীবন বীমা, ও তাপদাহ থেকে সুরক্ষা ব্যবস্থা। কিন্তু সৌদি আরব এখনো সে পথে হাঁটেনি।
বিশ্বকাপের গৌরবের আড়ালে আর কোনো শ্রমিকের প্রাণ না যায়—এটাই আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর জোর দাবি। তাদের মতে, প্রবাসী শ্রমিকনির্ভর দেশগুলোর উচিত মানবাধিকারকে সম্মান জানিয়ে শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা।