সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। ২০১৮ সালে ক্যামেরা ট্র্যাপিং জরিপে বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪টি, আর ২০২৪ সালে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী তা বেড়ে হয়েছে ১২৫টি। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে বাঘ শিকার রোধ, বনাঞ্চলে নজরদারি বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সংরক্ষণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু সংখ্যা বাড়লেই চলবে না, বরং বাঘের প্রজনন সক্ষমতা ও তাদের শিকার প্রাণীর সংখ্যা বাড়ানো, নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আরো জোর দিতে হবে। অন্যদিকে, সুন্দরবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে গত ২৫ বছরে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪২৫ জন। আহত হয়েছেন আরও ৯৫ জন।
এসব মানুষের মধ্যে রয়েছেন শরণখোলার মো. আব্দুস সামাদ হাওলাদার, যিনি দুই চোখ হারিয়েছেন বাঘের হামলায়। আবার ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর বনে মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ হারান ২২ বছর বয়সী শিপার হাওলাদার। সরকারি অনুমতি না থাকায় তার পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি, ফলে তাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম মানবিক সংকট।
২০১১ সালে চালু হওয়া ক্ষতিপূরণ নীতিমালা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৬৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুতে ১ লাখ টাকা, আহত হলে ৫০ হাজার টাকা এবং বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হলেও ভুক্তভোগীরা একে অপ্রতুল মনে করছেন। তাঁরা আজীবন মাসিক ভাতার দাবি জানিয়ে আসছেন।
বন বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব কমাতে গঠিত হয়েছে ‘ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম’, স্থাপন করা হয়েছে প্রায় ৬০ কিলোমিটার সীমানা ফেন্সিং, এবং বাঘের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে পানি ও আবাসস্থল উন্নয়নের পদক্ষেপ।
তবে পরিবেশবাদীরা এই অগ্রগতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। “সুন্দরবন রক্ষায় আমরা” সংগঠনের নুর আলম শেখ জানান, ২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১২ বছরে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশ সে লক্ষ্যে অনেক পিছিয়ে আছে। জলবায়ু পরিবর্তন, বিষ দিয়ে মাছ শিকার এবং আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের তৎপরতা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছে বলে তিনি সতর্ক করেন।