“আমরাও মানুষ, আমাদেরও ছুটি দরকার”—এই দাবিটি উঠে এসেছে রাজশাহীর গৃহকর্মীদের কণ্ঠে। তারা সপ্তাহে অন্তত একদিন ছুটি এবং মানবিক আচরণের আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার (২৮ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী নগরীর একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জনসংলাপে গৃহকর্মীদের অভিজ্ঞতা ও দাবি উঠে আসে। ‘রাজশাহী নগরীর গৃহকর্মীদের অবদান, সমস্যা এবং সমাধানের উপায়’ শীর্ষক এই জনসংলাপের আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থা বারসিক।
অনুষ্ঠানে ‘রাজশাহী নগরীর গৃহকর্মীদের অবদান, সমস্যা ও সমাধানে নীতি গবেষণা’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, রাজশাহী শহরে বর্তমানে ৮ থেকে ১০ হাজার গৃহকর্মী কাজ করছেন। চলতি বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত পরিচালিত এই গবেষণায় উঠে এসেছে যে, ১১ শতাংশ গৃহকর্মীর বয়স এখনো ১৫ বছরের নিচে, ৪০ শতাংশ গৃহকর্মী নিরক্ষর এবং ২৫ শতাংশ গৃহকর্মী মাসে দু’হাজার টাকারও কম বেতন পান। মাত্র ১০ শতাংশ পান চার হাজার টাকার বেশি।
গবেষণায় সুপারিশ করা হয়েছে—শিশুশ্রম বন্ধ, বেতন কেটে ছুটি না দেওয়ার সংস্কৃতি বিলুপ্ত এবং গৃহকর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য। সংলাপে অংশ নেওয়া গৃহকর্মীরা তাদের জীবনের কঠোর বাস্তবতা তুলে ধরেন। ৭০ বছর বয়সী শহরবানু বিবি, যার একটি হাত ভাঙা, তিনি মাসে এক হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন। তিনি বলেন, “ভুল করলেই বকা দেয়, মানুষ মাত্রই ভুল করে, এটুকু বুঝলে শান্তি পেতাম।”
গৃহকর্মী মুনমুন জানান, অসুস্থ হয়ে পড়ে গেলে তাকে গৃহকর্তার স্ত্রী পা দিয়ে লাথি মেরে উঠান। ছুটি চাওয়ায় তা মঞ্জুর হয়নি, বরং অসুস্থ শরীর নিয়েই তাকে কাজ করতে হয়েছে। আজেমা বেগম বলেন, “ওরা অফিসে কাজ করে ছুটি পায়, আমরা তো মানুষ না? ছুটি চাইলে বলে—চাইলে করো, না চাইলে চলে যাও।”
গৃহকর্মী শিলা জানান, তাকে একটি কাজের কথা বলে নিয়োগ দেওয়া হলেও কাজের পরিমাণ হয়ে যায় সাতটি। অসুস্থ হলে তাকে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে পর্যন্ত বাধা দেওয়া হয়।
নগর দরিদ্র অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, “গৃহকর্মীরা রান্না করেন, সেই খাবার নষ্ট হলেও তাদের ভালো খাবার দেওয়া হয় না। অসুস্থ হলে বেতন কেটে নেওয়া হয়, যা অমানবিক।” তিনি গৃহকর্তাদের আরও উদার হওয়ার আহ্বান জানান। উন্নয়নকর্মী সম্রাট রায়হান বলেন, “গৃহকর্মীদের সংগঠিত হওয়া দরকার, যেন তারা যৌক্তিক দাবি আদায়ে একত্রে সোচ্চার হতে পারে।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজশাহীর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নীলা ইয়াসমিন, শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুল আমিন, কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের সুপার ফেরদৌস রাবিয়া ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আইনুল হক। জনসংলাপ পরিচালনা করেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম এবং গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বারসিকের পলিসি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি অফিসার আমরীন বিনতে আজাদ।