সিরিজের প্রথম টেস্টে হারের পর ঘুরে দাঁড়ানো যে কতটা কঠিন, তা ক্রিকেটের নিয়মিত দর্শকেরা ভালোই জানেন। কিন্তু সেই কঠিন কাজটিই চট্টগ্রামে অসাধারণভাবে সহজ করে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বল হাতে পাঁচ উইকেট ও ব্যাট হাতে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে তিনি একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন। সেই সঙ্গে জায়গা করে নিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের এক বিরল ক্লাবে—একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ফাইফার নেওয়ার কৃতিত্বের তালিকায়।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে এই কীর্তি গড়েছেন মাত্র তিনজন: সাকিব আল হাসান (২০১১ বনাম পাকিস্তান, ২০১৪ বনাম জিম্বাবুয়ে), সোহাগ গাজী (২০১৩ বনাম নিউজিল্যান্ড) এবং এখন মেহেদী হাসান মিরাজ (২০২৫ বনাম জিম্বাবুয়ে)। দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় পর এই তালিকায় নতুন নাম যুক্ত হওয়াই বলে দেয়—মিরাজ কতটা স্পেশাল।
এই টেস্টে প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয় মাত্র ২২৭ রানে। জবাবে বাংলাদেশের পক্ষে সাদমান ইসলাম করেন ১২০ রান এবং মিরাজ খেলেন দারুণ ১০৪ রানের ইনিংস। দল পৌঁছে যায় ৪৪৪ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ের অবস্থা আরও খারাপ—মিরাজের বিষাক্ত অফস্পিনে গুঁড়িয়ে যায় মাত্র ১১১ রানে। বাংলাদেশ জেতে ইনিংস ও ১০৬ রানের বড় ব্যবধানে।
এই ম্যাচের পাঁচ উইকেটসহ মিরাজের টেস্ট ক্যারিয়ারে এখন ফাইফার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩-তে। বাংলাদেশিদের মধ্যে তার ওপরে আছেন কেবল সাকিব আল হাসান (১৯ ফাইফার) ও তাইজুল ইসলাম (১৬ ফাইফার)। তবে একটি দিক থেকে মিরাজ তাদের চেয়েও এগিয়ে—একই টেস্টে সর্বোচ্চ তিনবার ১০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব কেবল মিরাজেরই। সাকিব ও তাইজুল দু’বার করে এই অর্জনে পৌঁছেছেন।
মিরাজ যখন সেঞ্চুরির পথে হাঁটছিলেন, তখন তার সঙ্গী ছিলেন ১১ নম্বর ব্যাটার। প্রতিপক্ষের ফিল্ডিং ছিল আক্রমণাত্মক, বোলাররাও চড়াও হচ্ছিলেন বারবার। তবুও দারুণ ধৈর্য ও মেধায় ব্যাট করে সেঞ্চুরিতে পৌঁছান মিরাজ। তার ইনিংসটি যেন টেস্ট ব্যাটিংয়ের পাঠ্যবইয়ের নিখুঁত উদাহরণ।
অনেক দিন ধরেই সাকিব আল হাসানের উত্তরসূরি হিসেবে মিরাজের নাম উচ্চারিত হচ্ছিল। তবে এই টেস্ট ম্যাচ হয়তো সেই আলোচনায় একটি মোটা দাগ টেনে দিল। ব্যাটে-বলে ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স দিয়ে মিরাজ এখন শুধুই একজন অলরাউন্ডার নন, বরং একজন ম্যাচ উইনার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন।