টাঙ্গাইলের মধুপুরে পারিবারিক কলহের জেরে বিক্রি করে দেওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘাটাইল উপজেলার ছুনটিয়া গ্রাম থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) মধুপুর পৌরশহরের শেওড়াতলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। পারিবারিক মনোমালিন্যের জেরে অভিযুক্ত মা লাবনী আক্তার লিজা (১৮) এই অমানবিক কাজ করেন। ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এমরানুল কবীর।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মধুপুর উপজেলার পুন্ডুরা শেওড়াতলা এলাকার আজম আলীর ছেলে রবিউল ইসলামের সঙ্গে গোপালপুরের বলাটা গ্রামের লিটন মিয়ার মেয়ে লাবনীর দুই বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের মাধ্যমে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই রবিউলের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে দাম্পত্য জীবনে টানাপোড়েন শুরু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে রবিউল বাড়ির পাশে ঘর ভাড়া নিয়ে আলাদা বসবাস শুরু করেন। চার মাস আগে তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়।
রবিউল ইসলাম জানান, সন্তানের জন্মের পর সংসারে কিছুটা শান্তি ফিরেছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে লাবনী ছেলেকে নিয়ে তার বোনের বাড়ি ভূঞাপুরে যান এবং পরে স্বামীর অনুরোধ সত্ত্বেও ফিরে আসেননি। বারবার যোগাযোগের পর বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) লাবনী তাকে জানায়, সে তাদের সন্তান তামিমকে বিক্রি করেছে। পরে কৌশলে লাবনীকে ঘাটাইল উপজেলার পাকুটিয়ায় ডেকে এনে আটক করে বাড়ি আনা হয় এবং পুলিশকে অবহিত করা হয়।
লাবনী আক্তার লিজা স্বীকার করেছেন, মনির নামে এক ব্যক্তির সহায়তায় গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সিরাজগঞ্জের এক লোকের কাছে ৪০ হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি করেছেন। প্রাপ্ত টাকায় তিনি মোবাইল ফোন, পায়ের নুপুর ও নাকের নথ কিনেছেন। লাবনী বলেন, “আমার মাথা ঠিক ছিল না। এটা আমার ভুল হয়েছে।”
শিশুটির ফুপু রাজিয়া অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের পর থেকেই লাবনী প্রায়ই ঝগড়া করত এবং তাদের দারিদ্র্য জীবন নিয়ে অবজ্ঞা করত। কয়েকদিন আগে বাড়ি গেলেও কেউ কল্পনা করেনি যে সে নিজের সন্তান বিক্রি করে দেবে। তিনি দ্রুত শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং লাবনীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মধুপুর থানার ওসি মো. এমরানুল কবীর জানান, খবর পাওয়ার পর পরিদর্শক তদন্ত মো. রাসেল মিয়ার নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়। টাঙ্গাইলের তিনটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শেষে ভোরে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটি ঘাটাইলের ছুনটিয়া গ্রামে এক পালিত মায়ের কাছে ছিল। তবে লাবনী ক্রেতার সম্পূর্ণ তথ্য না জানানোয় উদ্ধার অভিযানে বাড়তি সময় লেগেছে বলে জানান তিনি।