লিভার আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত একটি অঙ্গ, যা রক্ত পরিষ্কার রাখা, হজমে সহায়তা করা এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেওয়ার কাজ করে। কিন্তু যখন এই অঙ্গটিতেই ক্যানসার হয়, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা প্রাথমিকভাবে টের পাওয়া যায় না। কারণ, লিভার ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো এতটাই সাধারণ যে আমরা অনেকেই তা গুরুত্ব দিই না। অথচ যখন এই লক্ষণগুলো প্রকট হয়ে ওঠে, তখন ক্ষতি অনেকটাই হয়ে যায়। তাই শরীরের সামান্য পরিবর্তনকেও অবহেলা না করে তা নজরে রাখা জরুরি। যেকোনো রোগ যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, তাহলে চিকিৎসার সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়, লিভার ক্যানসারের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই।
লিভার ক্যানসারের আটটি প্রাথমিক লক্ষণ রয়েছে যেগুলো সাধারণ মনে হলেও তা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। প্রথমত, ক্ষুধা কমে যাওয়া ও খুব অল্প খাওয়ার পরেই পেট ভরা মনে হওয়া একটি বড় লক্ষণ। দ্বিতীয়ত, অকারণে ওজন কমে যাওয়া, বিশেষ করে যদি আপনি ডায়েট বা ব্যায়াম না করে থাকেন, তাহলে তা লিভারের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। তৃতীয়ত, পেটের ডান দিকে পাঁজরের নিচে ব্যথা বা অস্বস্তি লিভার ক্যানসারের সম্ভাবনা জাগাতে পারে। এছাড়া বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, পেট বা পা ফুলে যাওয়া, জন্ডিস (চোখ ও ত্বকে হলুদ ভাব), চুলকানি, এবং পায়খানা হালকা ও প্রস্রাব গাঢ় রঙের হওয়া — এসবই প্রাথমিক কিন্তু গুরুত্বপুর্ণ লক্ষণ।
এই লক্ষণগুলো অবহেলা করা উচিত নয়। সাধারণত লিভার ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে নিরব থাকে, তাই এই পরিবর্তনগুলো দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। যদি আপনার হেপাটাইটিস বি/সি, অতিরিক্ত মদ্যপান, ফ্যাটি লিভার, স্থূলতা বা ডায়াবেটিসের মতো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থাকে, তাহলে নিয়মিত লিভার স্ক্রিনিং করানো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি লিভার ফাংশন টেস্ট, আলফা-ফিটোপ্রোটিন (AFP) টেস্ট, আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান অথবা এমআরআই করাতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, কোনো উপসর্গই অবহেলা করবেন না, নিজে থেকে ওষুধ খাওয়া বা মদ্যপান চালিয়ে যাওয়া উচিত নয় এবং হেপাটাইটিসের চিকিৎসা বন্ধ করা একেবারেই বোকামি হবে।
সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন।