খাবারের স্বাদ বাড়াতে লবণের জুড়ি নেই। ভাত, ভাজি, তরকারি থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট ও প্রক্রিয়াজাত খাবার—সব জায়গাতেই লবণের ব্যবহার দেখা যায়। অল্পতেই খাবারের স্বাদ বাড়ানো ছাড়াও এটি দীর্ঘদিন খাবার সংরক্ষণে সাহায্য করে। তবে দরকারের চেয়ে বেশি লবণ খেলেই শরীরে শুরু হয় নানা ধরনের সমস্যা।
হিউস্টন মেথডিস্ট হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান আমান্ডা মিডোস জানাচ্ছেন, লবণে থাকা সোডিয়াম শরীরের জন্য জরুরি এক খনিজ। এটি পেশির সংকোচন, স্নায়ুর স্বাভাবিক কার্যক্রম ও শরীরের জলীয় ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে। তবে অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরে জমতে থাকলে তা নানা জটিলতা সৃষ্টি করে। লবণাক্ত খাবার খাওয়ার পর অতিরিক্ত তৃষ্ণা পাওয়া, হাত–পা ফোলা বা মাথাব্যথা এর প্রাথমিক লক্ষণ। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে আসল ক্ষতি হয় কিডনি ও হৃদ্পিণ্ডে। অতিরিক্ত সোডিয়াম প্রক্রিয়াজাত করতে না পেরে শরীর পানি ধরে রাখে, রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং হৃদ্পিণ্ডকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। এতে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনির জটিলতা এমনকি কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক সর্বোচ্চ ২৩০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম বা এক চা–চামচ লবণ গ্রহণ করা উচিত। অথচ বাস্তবে গড়ে একজন আমেরিকান প্রতিদিন প্রায় ৩৪০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম গ্রহণ করেন, যেখানে শরীরের প্রয়োজন মাত্র ৫০০ মিলিগ্রাম। আমাদের খাদ্যাভ্যাসে প্রায় ৭০ শতাংশ সোডিয়াম আসে প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে, যেমন চিপস, সস, স্যুপ, টিনজাত ও হিমায়িত খাবার।
ডায়েটিশিয়ানরা পরামর্শ দেন—খাবারের লেবেল ভালোভাবে দেখে কেনা, প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়া, রান্নায় লবণের বিকল্প হিসেবে লেবু, ভেষজ, মশলা বা ভিনেগার ব্যবহার করা, আর সস ও স্ন্যাকস জাতীয় খাবারে সতর্ক থাকা।
অতএব, লবণ শরীরের জন্য অপরিহার্য হলেও এর অতিরিক্ত ব্যবহার নিঃশব্দে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সচেতনভাবে খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন আনলেই সুস্থ থাকা সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে—“লবণ খাবেন, তবে সীমিত পরিমাণে; তাহলেই শরীর থাকবে ভালো।”