বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের একজন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। কিন্তু এত শক্তিশালী হয়েও তিনি এক নারীর প্রতি ভয়প্রকাশ করেছেন, যাকে থামাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। সেই নারীর নাম দারিয়া সেরেনকো।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর ঠিক পরদিন, ২৫ ফেব্রুয়ারি, দারিয়া সেরেনকো প্রতিষ্ঠা করেন ‘ফেমিনিস্ট অ্যান্টি-ওয়ার রেজিস্ট্যান্স’ নামের একটি যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন। এই নারী সংগঠনটি রাশিয়ার পুরুষতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যুদ্ধবিরোধী বার্তা ও প্রতিবাদ ছড়িয়ে দিতে সংগঠনটি রাশিয়ার ৮০টির বেশি শহরে হাজার হাজার নারীকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করে।
নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষিত এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা দোকানের মূল্য ট্যাগে, সামাজিক মাধ্যমে ও পোস্টকার্ডের মাধ্যমে যুদ্ধবিরোধী কবিতা, স্লোগান এবং ইউক্রেনের নারীদের অভিজ্ঞতাভিত্তিক বার্তা ছড়াতে থাকে। এক পোস্টকার্ডে লেখা ছিল, “আবার যুদ্ধ। কেউ কথা বলে না। আমাদের পূর্বপুরুষদের হৃদয় ব্যথিত হয় যখন আমরা সৈনিকের পোশাক পরি, যখন আমরা প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাই।”
পশ্চিমা বিশ্বে সেরেনকোর নাম তেমন পরিচিত না হলেও, রাশিয়ায় তিনি পুতিন সরকারের অন্যতম ‘শত্রু’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। তার কর্মকাণ্ড দমন করতে পুতিন সরকার একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২৩ সালে তাকে “বিদেশি এজেন্ট” হিসেবে ঘোষণার পাশাপাশি, তার সংগঠনকে ‘অপ্রীতিকর সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়—যার ফলে তার ছয় বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
সেরেনকো যুদ্ধের প্রথম দুই সপ্তাহ জেলে ছিলেন এবং ২০২২ সালের মার্চে জর্জিয়ায় নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। ২০২৪ সালের এপ্রিলে রাশিয়া তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং তার নতুন পাসপোর্ট প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। বর্তমানে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।
এক সাক্ষাৎকারে সেরেনকো জানান, যুদ্ধ শুরুর পর কারাগারে থাকার সময় তার দরজায় লেখা ছিল: “জনগণের শত্রু”। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কোর একটি আদালত তাকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেয়, কারণ তিনি ইনস্টাগ্রামে একটি লাল বিস্ময়বোধক চিহ্ন পোস্ট করেছিলেন, যা বিরোধী দলের ‘স্মার্ট ভোট’ কৌশলের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
২০১৯ সালে ক্রেমলিনে তার উচ্চপদস্থ নিয়োগকর্তারা তাকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সাফ জানান, “তুমি যে হাত তোমাকে খাওয়াচ্ছে, তাকে কামড়াচ্ছ।” তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, হয় তিনি সরকারের গ্যালারিতে নির্ধারিত কাজ করবেন, নয়তো অ্যাক্টিভিজম চালিয়ে গেলে চাকরি ছাড়তে হবে। সেরেনকো দ্বিতীয় পথটি বেছে নেন।