মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অবস্থিত ক্রাফট কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত হয় বর্ণাঢ্য ‘বাংলাদেশ উৎসব’। ২৬ জুন বৃহস্পতিবার আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গান, নাচ, ফ্যাশন শো এবং ঐতিহ্যবাহী খাবারের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও লোকজ ঐতিহ্য। তবে আয়োজনে প্রবাসীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ কম থাকায় কিছুটা হতাশাও ছিল।
অনুষ্ঠানস্থলটি সাজানো হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রিকশা ও অন্যান্য দেশীয় কারুশিল্প দিয়ে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশটির ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার ট্যুরিজম, আর্টস এবং কালচার মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল ওয়াইবিএইচজি দাতো শাহারুদ্দিন বিন আবু সহত। এছাড়াও মালয়েশিয়ার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ এবং হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবার উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান ও তার স্ত্রী পেন্ডোরা চৌধুরী অতিথিদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। বক্তব্যে হাইকমিশনার মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে মালয়েশিয়ার স্বীকৃতি প্রদান এবং সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমের ঢাকা সফরের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
হাইকমিশনার আরও জানান, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের পারস্পরিক বিশ্বাস ও বন্ধনের ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা, জ্বালানি, সংস্কৃতি ও মানবসম্পদ উন্নয়নসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ছে।
আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যাতে অংশ নেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পী, প্রবাসী বাংলাদেশি ও হাইকমিশনের সদস্যরা। বিশেষ আকর্ষণ ছিল জনপ্রিয় শিল্পী মেহরিনের পরিবেশনা।
অতিথিদের আপ্যায়নে পরিবেশন করা হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার, যার মধ্যে ‘স্মোকড ইলিশ’ বিদেশি অতিথিদের দারুণভাবে মুগ্ধ করে। এছাড়া ফুচকা, চা, ঝালমুড়ি ও পিঠার স্টল ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
অনুষ্ঠানস্থলে স্থাপিত ‘বাংলাদেশ কর্নারে’ প্রদর্শন করা হয় জামদানি, হস্তশিল্প, রপ্তানিযোগ্য পণ্য এবং মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রকাশনা। প্রাণ, মৈত্রী, হোপসহ বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য ও সেবা উপস্থাপন করে। ন্যাশনাল ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক রেমিট্যান্স বুথ স্থাপন করে প্রবাসীদের সেবা সম্পর্কে অবহিত করে।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি ফ্রেম উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় সেক্রেটারি জেনারেল দাতো শাহারুদ্দিনকে।
তবে এ আয়োজনে অংশগ্রহণ নিয়ে সমালোচনা করেন মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি প্রকৌশলী বাদলুর রহমান খান। তিনি বলেন, প্রবাসীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করে শুধু হাইকমিশনের স্টাফ ও তাদের পরিবারের অংশগ্রহণে এ আয়োজন সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, প্রবাসীদের বাদ দিয়ে বিদেশি অতিথিদের দিয়ে মাত্র দুই ঘণ্টার জন্য এ আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিংয়ের যে প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে, তা যথার্থ হয়নি। হাইকমিশনে আওয়ামী ‘দোসরদের’ উপস্থিতি উল্লেখ করে তিনি এ আয়োজনের পেছনে অন্য উদ্দেশ্য আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান।