চিকিৎসা পরিভাষায় চুল পড়াকে বলা হয় অ্যালোপেশিয়া। এটি নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই একটি সাধারণ সমস্যা। বয়স, বংশগতি, স্বাস্থ্যগত সমস্যা কিংবা জীবনযাত্রার ধরন—নানান কারণেই চুল পড়তে পারে। এ সমস্যার ব্যাপকতা এতটাই যে, এটি আজকাল কোনো বয়স, লিঙ্গ বা জাতিগোষ্ঠীর সীমানায় আটকে নেই।
চুল পড়ার পরিসংখ্যান ও বাস্তবতা
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক জরিপ অনুযায়ী, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ১৬ শতাংশ পুরুষ চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন, যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। অন্যদিকে হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের তথ্যমতে, নারীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে চুল পড়ার সমস্যায় পড়েন।
চুল পড়ার চিকিৎসা ও প্রতিকার
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আঁচল পান্থ মনে করেন, সমস্যার শুরুতেই বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। সঠিক রোগ নির্ণয়ের পর প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা জরুরি। মিনোক্সিডিল নামক একটি ওষুধ চুল পড়া রোধে কার্যকর হলেও এটি নতুন চুল গজায় না। অপরদিকে কেটোকোনাজল, একটি অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ, মাথার ত্বকে প্রদাহ ও ফাঙ্গাল ইনফেকশন কমিয়ে চুল পড়া হ্রাসে সাহায্য করে।
জীবনযাত্রার প্রভাব
চুল পড়া রোধে জীবনের ধরন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন টাইট বা ভারী বেণী করা, হিট স্টাইলিং, ধূমপান, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব—সবই চুল পড়া ত্বরান্বিত করে। ট্রাইকোলজিস্ট এনিটান আগিডি বলছেন, চুলের ধরন অনুযায়ী পরিচর্যার পদ্ধতি ঠিক করতে হবে। বিশেষ করে আফ্রো-স্টাইল চুলে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করলে ট্র্যাকশন অ্যালোপেশিয়া বা ফ্রন্টাল ফাইব্রোসিং অ্যালোপেশিয়া হতে পারে।
দৈনন্দিন যত্ন ও চুল ধোয়ার নিয়ম
চুল পড়া বন্ধে নিয়মিত মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখা জরুরি। তৈলাক্ত ত্বক হলে প্রতিদিন অথবা এক দিন পরপর চুল ধুয়ে ফেলা উচিত। শুষ্ক বা স্বাভাবিক ত্বকের জন্য সপ্তাহে অন্তত তিনবার শ্যাম্পু করা দরকার।
হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট: সহজ সমাধান নয়
চুল পড়া রোধে অনেকেই হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টকে সহজ সমাধান ভাবলেও এটি একটি জটিল ও ব্যয়বহুল কসমেটিক সার্জারি। এটি স্বল্পমেয়াদে কার্যকর হলেও, পরবর্তী যত্নের অভাবে প্রাকৃতিক চুল আবারও পড়ে যেতে পারে। ডা. পান্থ ও এনিটান আগিডি মনে করেন, হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট শেষ বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত, কারণ এটি সবার উপযোগী নয়।