আমরা সাধারণত পৃথিবীকে সমতল ভূমি হিসেবে দেখি। তবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থানরত নভোচারীরা পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৫০ মাইল ওপরে ভেসে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিতে আমাদের গ্রহকে অবলোকন করেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, পৃথিবীর বেশ কিছু বিখ্যাত স্থান মহাকাশ থেকেও স্পষ্টভাবে দেখা যায়। বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে এমন ১০টি স্থানের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রথমেই রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী আমাজন। পেরু থেকে শুরু হয়ে ব্রাজিল অতিক্রম করে আটলান্টিক মহাসাগরে গিয়ে মিশেছে চার হাজার মাইলেরও বেশি বিস্তৃত এই বিশাল নদী, যা মহাকাশ থেকেও সহজেই চোখে পড়ে। এরপর রয়েছে জর্ডানের মরুভূমি উপত্যকা ওয়াদি রাম, যাকে বলা হয় ‘চাঁদের উপত্যকা’। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত এই স্থানটি মহাকাশ থেকেও দৃশ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত গোল্ডেন গেট ব্রিজ শীতকালে কুয়াশা কম থাকলে মহাকাশ থেকেও দেখা যায়। একইভাবে, ২৭৭ মাইল দীর্ঘ ও ১৮ মাইল প্রশস্ত প্রাকৃতিক বিস্ময় গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন মহাকাশে দীর্ঘ নদীর মতো ধরা দেয়। অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ, বিশ্বের বৃহত্তম প্রবালপ্রাচীর ব্যবস্থা, প্রায় ১ হাজার ৪৩০ মাইলজুড়ে বিস্তৃত নীলাভ সৌন্দর্য নিয়ে মহাকাশ থেকেও স্পষ্ট দেখা যায়।
তালিকায় আছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউটার সল্ট লেক সিটির কাছে অবস্থিত বিশাল কেনেকট কপার মাইন। আড়াই মাইল প্রশস্ত ও আধা মাইল গভীর এই খনি আকারে এত বড় যে মহাকাশ থেকেও সহজে চেনা যায়। পৃথিবীর ছাদ হিমালয় পর্বতমালা পাকিস্তান থেকে ভুটান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে বরফঢাকা শিখরের মাধ্যমে মহাকাশে চোখে পড়ে।
এছাড়া রয়েছে মানুষের তৈরি আশ্চর্য, দুবাইয়ের পাম জুমেইরা—পারস্য উপসাগরের বুকে খেজুরগাছের আকারে নির্মিত বিশ্বের বৃহত্তম কৃত্রিম দ্বীপ। মিসরের গিজার পিরামিড, প্রাচীন বিশ্বের সাত আশ্চর্যের মধ্যে একমাত্র টিকে থাকা স্থাপনাটিও মহাকাশ থেকে দৃশ্যমান। আর শেষদিকে রয়েছে সুয়েজ খাল, ১২০ মাইল দীর্ঘ এই কৃত্রিম খাল ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যের পথ খুলে দিয়েছে এবং মহাকাশ থেকেও মরুভূমির মাঝে সহজে আলাদা করে চেনা যায়।
এইসব প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম নিদর্শন আমাদের পৃথিবীর বৈচিত্র্য ও বিস্ময়কর সৌন্দর্যকে আরও একবার তুলে ধরে, যা মহাকাশ থেকেও অদ্ভুতভাবে মোহিত করে।