কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত পাকিস্তানের ভেতরে একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের এই অভিযানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত ছয়টি শহর টার্গেট করা হয়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এই হামলার নেপথ্যের কারণ ও সম্ভাব্য পরিণতি।
হামলার লক্ষ্যস্থল ছিল মূলত পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের আহমেদপুর শরকিয়া, মুরিদকে, সিয়ালকোট ও শাকরগড়। পাশাপাশি পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদ ও কোটলিতেও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। আহমেদপুরে একটি মসজিদে হামলায় পাঁচজন নিহত হন, যাদের মধ্যে ছিল তিন বছর বয়সী একটি শিশু।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানায়, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে তিনটি রাফায়েল জেট। যদিও ভারত এই দাবি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করেনি। পাকিস্তানের মতে, ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিজস্ব আকাশসীমা থেকেই ছোড়া হয়েছে, কোনো বিমান সীমান্ত অতিক্রম করেনি।
এই হামলার পেছনের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ২২ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে পেহেলগামের বৈসারণ উপত্যকায় সংঘটিত এক নৃশংস সন্ত্রাসী হামলা। বন্দুকধারীরা পর্যটকদের ওপর হামলা চালিয়ে ২৫ জন পর্যটক ও এক স্থানীয় গাইডকে হত্যা করে। হামলাকারীরা ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে অমুসলিমদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ভারতের জনমনে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়। ভারত এই হামলার জন্য ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF) নামক একটি গোষ্ঠীকে দায়ী করে, যাদের পাকিস্তান থেকে পরিচালিত বলে দাবি করা হয়। তবে পাকিস্তান সরকার এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
ভারতের সামরিক অভিযানের নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’। এই নামকরণের পেছনে প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে—সিঁদুর হলো হিন্দু বিবাহিত নারীদের কপালে ব্যবহৃত লাল গুঁড়া। পেহেলগামের হামলায় যেসব হিন্দু পুরুষ নিহত হয়েছেন, তাদের স্ত্রীর কপাল থেকে সিঁদুর মুছে গেছে—এটি প্রতীকীভাবে শোক ও প্রতিশোধের ইঙ্গিত দেয়।
কাশ্মীর দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৪৭, ১৯৬৫ এবং ১৯৯৯ সালে দুই দেশ কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধে জড়িয়েছে। ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে; পাকিস্তান বলছে তারা কেবল নৈতিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দেয়।
সাম্প্রতিক এই হামলার কূটনৈতিক প্রভাবও ব্যাপক। ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে, যা পাকিস্তানে পানি সংকট সৃষ্টি করতে পারে। দুই দেশই একে অপরের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে এবং ভিসা ও সীমান্ত চলাচল বন্ধ রেখেছে। আকাশপথও বন্ধ রয়েছে। কাশ্মীরের ভেতরে ভারতীয় বাহিনী ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়েছে এবং দুই হাজারের বেশি মানুষকে আটক করেছে।