বিয়ে মানেই কেবল ভালোবাসা নয়—এটি জীবনের একটি নতুন অধ্যায়, যেখানে দুটি মানুষ শুধু একে অপরের সঙ্গী হন না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও পারিবারিক জীবনকেও গড়ে তোলেন। এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কে প্রবেশের আগে নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানা ও সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে অনেক চিকিৎসকই বিয়ের আগে কিছু নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন, যাকে বলা হয় Premarital Medical Check-Up বা বিয়ের পূর্ববর্তী স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এটি কেবল দাম্পত্য জীবনের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কেন দরকার বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা?
বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে সংক্রামক ও যৌনবাহিত রোগ প্রতিরোধ সম্ভব হয়, বংশগত রোগ সম্পর্কে আগেভাগেই ধারণা পাওয়া যায়, সন্তান নেওয়ার আগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া যায় এবং মানসিকভাবে দুজনই সজাগ ও সচেতন থাকতে পারেন। এতে সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিশ্বাস, স্বচ্ছতা ও সুস্থতার ভিত্তিতে।
বিয়ের আগে করিয়ে নিতে হবে যে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট:
১. হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস: থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না তা জানতে এই টেস্ট জরুরি। বর ও কনে দুজনেই বাহক হলে সন্তানের মধ্যে গুরুতর রক্তজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. ব্লাড গ্রুপিং ও Rh টাইপিং: দুজনের রক্তের গ্রুপ ও Rh ফ্যাক্টর জেনে ভবিষ্যৎ সন্তানের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলা করা সম্ভব।
৩. যৌনবাহিত রোগের টেস্ট (HIV, হেপাটাইটিস B ও C, সিফিলিস): যৌনবাহিত সংক্রমণ প্রতিরোধে এ পরীক্ষা আবশ্যক।
৪. বন্ধ্যত্ব সংক্রান্ত পরীক্ষা: দুজনের সন্তান ধারণের সক্ষমতা যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ। শুক্রাণু পরীক্ষা, হরমোন টেস্ট ও আলট্রাসনোগ্রাফি এর অন্তর্ভুক্ত।
৫. বংশগত রোগের স্ক্রিনিং: আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে হলে জিনগত রোগের ঝুঁকি বাড়ে, তাই স্ক্রিনিং প্রয়োজন।
৬. দীর্ঘমেয়াদি রোগের পরীক্ষা (ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড): এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে দাম্পত্য জীবন আরও সুস্থ হয়।
৭. মানসিক স্বাস্থ্য মূল্যায়ন: সিজোফ্রেনিয়া, বিষণ্ণতা বা বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো মানসিক অসুস্থতা চিহ্নিত করে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
প্রি-ম্যারিটাল চেকআপের ধাপগুলো কী?
১. ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ: পারিবারিক ইতিহাস ও স্বাস্থ্যগত তথ্য শেয়ার করা।
২. শারীরিক পরীক্ষা: উচ্চতা, ওজন, রক্তচাপ ইত্যাদি মাপা।
৩. ল্যাব টেস্ট: উল্লেখিত সাতটি জরুরি পরীক্ষা করানো।
৪. জিনগত রোগ স্ক্রিনিং: থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগ শনাক্তকরণ।
৫. রিপোর্ট বিশ্লেষণ ও পরামর্শ: রিপোর্ট দেখে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ।
বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো মানে কাউকে সন্দেহ করা নয়; বরং এটি ভালোবাসা ও সম্পর্কের প্রতি দায়িত্বশীলতার প্রতীক। যদি দাম্পত্য জীবনের শুরুতেই স্বচ্ছতা, সচেতনতা ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, তবে ভবিষ্যতের সম্পর্ক হবে আরও দৃঢ়, সুন্দর ও সুখকর। তাই নিজের ও প্রিয়জনের সুস্থতার জন্য বিয়ের আগে এই সাতটি জরুরি টেস্ট অবশ্যই করিয়ে নিন।
বিয়ে মানেই ভালোবাসা—আর ভালোবাসার ভিত্তি হোক স্বাস্থ্য, সচেতনতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা।
সূত্র: টিআইআরটিএ মেডিকেল জার্নাল