পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্বের অনুসন্ধান প্রায় শতাব্দীজুড়ে চলে আসছে। তবে এবার বিজ্ঞানীরা নতুন এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের কাছাকাছি পৌঁছেছেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি গবেষণায় সৌরজগতের বাইরের এক গ্রহ, K2-18b-এ প্রাণের অস্তিত্বের একটি জোরালো ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এই আবিষ্কারটি হয়েছে পৃথিবী থেকে প্রায় ১২০০ আলোকবর্ষ দূরে, এবং এটি আমাদের মহাবিশ্বে প্রাণের অস্তিত্বের খোঁজে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত।
K2-18b একটি সুপার-আর্থ গ্রহ, যা পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ৮.৬ গুণ বেশি ভারী এবং ২.৬ গুণ বড়। এটি একটি “হ্যাবিটেবল জোন”-এ অবস্থিত, অর্থাৎ এমন একটি অঞ্চলে, যেখানে পানি তরল অবস্থায় থাকতে পারে। এই গ্রহটি তার নক্ষত্রের কাছাকাছি অবস্থান করছে, যা গ্রহটির পৃষ্ঠে তরল পানি থাকতে সক্ষম করে। এই গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, K2-18b-এ হয়তো বিশাল মহাসাগর থাকতে পারে, এবং এর বায়ুমণ্ডলও হাইড্রোজেন-সমৃদ্ধ, যা একে ‘হায়সিয়ান ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করে।
এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি সম্ভব হয়েছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) ব্যবহার করে। JWST-এর MIRI (Mid-Infrared Instrument) এবং পূর্ববর্তী NIRISS ও NIRSpec ডেটার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা K2-18b গ্রহের বায়ুমণ্ডলে ডাইমিথাইল সালফাইড (DMS) এবং ডাইমিথাইল ডিজালফাইড (DMDS) এর রাসায়নিক চিহ্ন পেয়েছেন। এই রাসায়নিকগুলি পৃথিবীতে শুধুমাত্র জীবিত প্রাণী, বিশেষত সামুদ্রিক শৈবাল দ্বারা উৎপন্ন হয়। এর মানে হল, এই রাসায়নিকগুলির উপস্থিতি এই গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিতে পারে।
তবে, এখনও এটি চূড়ান্ত প্রমাণ নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সিগন্যাল ‘তিনটি-সিগমা’ স্তরে পৌঁছেছে, যা একে শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে, তবে আরও গবেষণা এবং বিশ্লেষণ প্রয়োজন। পাঁচ-সিগমা মান নিশ্চিত হলে, তা জীবনের প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হবে।
গবেষণার প্রধান অধ্যাপক নিক্কু মাধুসূদন বলেন, “এটা হয়তো সেই সময়, যখন আমরা প্রথম সত্যিই প্রশ্ন করতে পারি—আমরাই কি একমাত্র জীবন্ত জাতি এই মহাবিশ্বে?” তাঁর এই মন্তব্য পৃথিবীবাসীর কাছে প্রাণের অস্তিত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা নিয়ে একটি নতুন আলোচনার সূচনা করেছে। এই গবেষণার ফলাফল যদি সত্যি হয়, তবে এটি মানবজাতির ইতিহাসে একটি নতুন যুগের সূচনা হতে পারে। সৌরজগতের বাইরে প্রাণের উপস্থিতি নিশ্চিত হলে, তা আমাদের মহাবিশ্বে নিজের স্থান এবং অন্যান্য প্রাণীজগতের অস্তিত্ব নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।
এখনও সময় বাকি। বিজ্ঞানীরা আরও বিশ্লেষণ এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে চান যে এই আবিষ্কার সত্যিই প্রাণের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয় কিনা। তবে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা মানবজাতিকে মহাবিশ্বে প্রাণের অস্তিত্বের সন্ধানে এক নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এই গবেষণা যদি নিশ্চিত হয়, তা মানবজাতির জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হতে পারে। সৌরজগতের বাইরে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা আমাদের মহাবিশ্বের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করবে। তবে, আরও গবেষণার প্রয়োজন, যা এই আবিষ্কারকে চূড়ান্ত প্রমাণে পরিণত করতে সহায়তা করবে।