চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এবার ইতিহাস গড়লেন, যখন তারা টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ফ্যাট সেলকেই ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষে রূপান্তরিত করার এক অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করলেন। এই বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারটি ডায়াবেটিস চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ রোগীর জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে।
গবেষকরা প্রথমবারের মতো ফ্যাট সেল তথা দেহে জমা চর্বি কোষকে পুনরায় জিনপ্রকৌশলের মাধ্যমে ইনসুলিন উৎপাদনকারী বিটা কোষে রূপান্তরিত করেছেন। এই নতুন প্রযুক্তি গড়ে তুলেছে এক ধরনের “ইনসুলিন ফ্যাক্টরি” যা স্বাভাবিকভাবে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। বিশেষ করে, এই রূপান্তর প্রক্রিয়া ফ্যাট কোষকে স্টেম সেলে পরিণত করে, যা পরে অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষে রূপান্তরিত হয়।
প্রাথমিক গবেষণায় রূপান্তরিত কোষগুলো ৯৮% কার্যকারিতার সাথে ইনসুলিন উৎপাদন এবং শর্করা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম প্রমাণিত হয়েছে। এর মানে হল, ভবিষ্যতে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ইনসুলিন ইনজেকশনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রযুক্তি সফলভাবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রমাণিত হলে এটি ডায়াবেটিস চিকিৎসায় এক বিপ্লব সৃষ্টি করবে।
তবে, এই প্রযুক্তির দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতা এবং কোষের কার্যক্ষমতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ এখনও সামনে রয়েছে। বিশেষত, রোগীর দেহে রূপান্তরিত কোষের ইমিউন প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের সমস্যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এর জন্য আরও গবেষণা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
যদিও এই প্রযুক্তির বাণিজ্যিক ব্যবহার এখনো দূর অস্ত, তবে গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল এবং সাফল্যের সম্ভাবনা একে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস চিকিৎসায় একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং জিনপ্রকৌশলের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হতে পারে, যদি এই নতুন পদ্ধতি পূর্ণরূপে কার্যকর প্রমাণিত হয়।
বিশ্বজুড়ে ৯০ লক্ষেরও বেশি টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগী এই নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন, যেটি তাদের জীবনযাত্রায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হতে পারে।