একসময় সন্ধ্যা নামলেই বাড়ির বারান্দা বা উঠোনে বসে বই হাতে নিয়ে ডুবে যেতেন অনেকেই। গল্প-উপন্যাসের চরিত্রগুলো হয়ে উঠত জীবনের অংশ। এখন অবশ্য দৃশ্যটা বদলে গেছে—হাতে মোবাইল, ট্যাব বা ল্যাপটপ; ডিজিটাল স্ক্রিনেই কেটে যায় দিনের বড় অংশ। ফলে বই পড়ার অভ্যাস কমে এসেছে আগের তুলনায় অনেকটা।
তবুও যারা এখনো বইকে সঙ্গী করেন, তারা জানেন এর আনন্দের কোনো তুলনা নেই। শুধু আনন্দই নয়, গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন বই পড়ার অভ্যাস শরীর ও মন উভয়ের জন্যই উপকারী। এমনকি প্রতিদিন অল্প সময় বই পড়লে আয়ু পর্যন্ত বাড়তে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রতিদিন বই পড়ার স্বাস্থ্যকর ৬ উপকারিতা—
১. ঘুমের আগে মনকে শান্ত করে
ঘুমানোর আগে বই পড়া একটি অসাধারণ অভ্যাস। এটি ঘুমের মান উন্নত করে, গভীর ঘুমে সহায়তা করে এবং অনিদ্রা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তবে মোবাইল বা ট্যাব থেকে পড়া এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ স্ক্রিনের নীল আলো ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন উৎপাদন কমিয়ে দেয়।
২. দীর্ঘায়ু লাভ
ইয়েল ইউনিভার্সিটি স্কুল অব পাবলিক হেলথের ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট বই পড়লে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ২০ শতাংশ কমে। বিশেষ করে কল্পকাহিনি পড়া মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে, যা গড়ে দুই বছর পর্যন্ত আয়ু বাড়াতে পারে।
৩. মস্তিষ্কের ক্ষমতা ধরে রাখা
নিয়মিত বই পড়া মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যারা নিয়মিত পড়েন, বয়স বাড়লেও তাদের স্মৃতি ও চিন্তাশক্তির অবনতি ধীরে ঘটে।
৪. স্ট্রেস কমায়
কল্পকাহিনি পড়া মনের চাপ কমাতে কার্যকর। এটি মানসিক প্রশান্তি আনে, ইতিবাচক আবেগ জাগায় এবং হতাশা, দুশ্চিন্তা ও নেতিবাচক অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে।
৫. আইকিউ বৃদ্ধি করে
পড়ার মাধ্যমে শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়, যা সরাসরি আইকিউ বা বুদ্ধিমত্তা বাড়ায়। বিশেষ করে শিশুদের ছোটবেলা থেকে পড়ার অভ্যাস থাকলে তারা আইকিউ পরীক্ষায় ভালো ফল করে।
৬. স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ায়
বই পড়া স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য বোঝার দক্ষতা বাড়ায়, যা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। সঠিক স্বাস্থ্য-সচেতনতা রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থতা বজায় রাখতে বড় ভূমিকা রাখে।
অতএব, প্রতিদিন অল্প হলেও বই পড়ুন। এটি শুধু বিনোদন নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ, শান্ত ও বুদ্ধিদীপ্ত জীবনের একটি অপরিহার্য অভ্যাস।