ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস হচ্ছে একটি দীর্ঘমেয়াদি হজমজনিত অসুখ, যা আমাদের অন্ত্রতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। এটি খুবই অস্বস্তিকর একটি রোগ, যার লক্ষণ অনেক সময় লজ্জাজনক মনে হওয়ায় অনেকে চিকিৎসকের কাছে জানাতেও দ্বিধাবোধ করেন।
সাধারণ লক্ষণসমূহ
এই রোগের প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—পেট ব্যথা, একটানা পাতলা পায়খানা (ডায়রিয়া) বা কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফেঁপে থাকা, এবং মলত্যাগের সময় অস্বস্তি। অনেক সময় পায়ুপথ দিয়ে শ্লেষ্মা বের হয় বা প্রস্রাবের বেগ বারবার আসে, কিন্তু মূত্রাশয় পুরোপুরি খালি হয় না বলে মনে হয়। কিছু ক্ষেত্রে বমি ভাব, ঢেকুর ওঠা, ক্লান্তি, এমনকি সহবাসের সময় ব্যথাও দেখা দেয়।
এসব উপসর্গ মাঝে মাঝে কমে আসলেও আবার ফিরে আসে। লক্ষণগুলো দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে তা ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য ও দৈনন্দিন জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
আইবিএসের কারণ
এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, মানসিক চাপ, জীবনযাত্রার অনিয়ম এবং পারিবারিক ইতিহাস এর জন্য দায়ী। অতিরিক্ত চা-কফি, মশলাযুক্ত খাবার, কোল্ড ড্রিংক বা তৈলাক্ত খাবারও এই রোগকে ট্রিগার করতে পারে।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি পাঁচজনের একজন আইবিএসে আক্রান্ত। মেয়েরা, এশিয়ান শিশুরা এবং নয় থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুরা এই রোগে বেশি ভোগে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিশুদের ক্ষেত্রে উপসর্গ কমে আসে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে উপসর্গ দীর্ঘমেয়াদি হয়।
রোগ নির্ণয়
আইবিএস শনাক্তের নির্দিষ্ট কোনো পরীক্ষা নেই। তবে চিকিৎসকরা রক্ত ও মলের পরীক্ষার মাধ্যমে অন্যান্য রোগ排除 করে আইবিএস নির্ণয় করে থাকেন।
চিকিৎসা ও করণীয়
আইবিএস সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য না হলেও সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা এবং লক্ষণভিত্তিক ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে আঁশযুক্ত খাবার যেমন ওটস, রাই, ডাল, তিসির গুঁড়ো খেতে হবে।
ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে কম আঁশযুক্ত জটিল কার্বোহাইড্রেট খাওয়া উত্তম।
প্রতিদিন ২৪০ গ্রাম ফলের বেশি খাওয়া যাবে না। কলা, আপেল, নাশপাতি নিরাপদ।
প্রক্রিয়াজাত, বাইরের ও মসলাদার খাবার, কেক, ফাস্টফুড, কোমল পানীয় সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে।
দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
যাদের নির্দিষ্ট কিছু খাবারে সমস্যা হয় (যেমন—ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স বা গ্লুটেন সেনসিটিভিটি), তাদের সেইসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। কিছু মানুষ দই, পুদিনা বা ক্যামোমাইল চা থেকে উপকার পেয়েছেন, যদিও এসবের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মেলেনি।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন?
যদি উপসর্গ এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, বিশেষ করে যদি মলের সাথে রক্ত আসে, পেট ব্যথায় ঘুম ভেঙে যায়, ওজন হঠাৎ করে কমে যায় অথবা আপনার বয়স ৫০ বছরের বেশি হয়—তাহলে দ্রুত একজন গ্যাস্ট্রোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।
অনেকেই এই অসুখকে লজ্জাজনক মনে করে চিকিৎসা নিতে দ্বিধা করেন, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। তবে মনে রাখতে হবে, সময়মতো চিকিৎসা না নিলে আইবিএস আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।